নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে অক্সফোর্ডে তৈরি ভ্যাকসিন চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ এর ফেইজ-১ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল আগামী ১০ দিনের (জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ) মধ্যে পাওয়া যেতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
Advertisement
বহুল আকাঙ্ক্ষিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের এই ভ্যাকসিনের ফেইজ-১ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয় গত এপ্রিলে; যা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ফেইজ-১ পরীক্ষার ফলোআপ চলছে বলে ঘোষণা দিয়েছে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপ।
এদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের পুনেভিত্তিক সিরাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সুরেশ যাদব দেশটির ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফলাফল আশাব্যঞ্জক হলে তাদের কোম্পানি ভ্যাকসিনটি স্বল্প পরিমাণে উৎপাদন শুরু করবে। কোটি কোটি ডোজ উৎপাদনের লক্ষ্যে ভারতীয় এই কোম্পানির সঙ্গে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপ ইতোমধ্যে একটি চুক্তিও করেছে।
তিনি বলেন, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফল যদি আশাব্যঞ্জক হয়, তাহলে আমরা ২০ থেকে ৩০ লাখ ডোজ উৎপাদন করবো। এছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সম্পন্ন হলে আরও কোটি কোটি ডোজ উৎপাদন করা হবে।
Advertisement
মে মাসের চতুর্থ সপ্তাহে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপ দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ শুরু করে। প্রথম ধাপের চূড়ান্ত ফল জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে পাওয়া যাবে। এই ফল যদি আশাব্যঞ্জক হয় তাহলে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা একসঙ্গে চালানো হবে বলে জানিয়েছেন যাদব।
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সম্পন্ন হতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে। যুক্তরাজ্যে ভাইরাসের বিস্তার কমে আসায় ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্যাকসিনটি পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাদব বলেন, ভাইরাসটির বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ সুরক্ষামূলক হবে বলে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপ বেশ আত্মবিশ্বাসী। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় ডোজ নির্ধারণের জন্য স্বেচ্ছাসেবীদের বিক্ষিপ্তভাবে বাছাই করা হবে। কারা এই ভ্যাকসিন অথবা নিয়ন্ত্রিত ভ্যাকসিনের একটি আর কারা দুটি ডোজ পাবেন সেটি বিক্ষিপ্তভাবে নির্ধারণ হবে।
রেসাস ম্যাকাকু প্রজাতির বানরের দেহে একক ডোজ প্রয়োগ করার পর নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন। তবে একক ডোজ পাওয়া এই প্রজাতির বানরকে ভাইরাসের সংস্পর্শে নেয়া হলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয় ভ্যাকসিনটি।
প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ার এই খবর কেন হতাশার নয়, তার ব্যাখ্যায় যাদব বলেন, বানরগুলোকে বেশি ঘনত্বের ভাইরাসের সংস্পর্শে নেয়া হয়েছিল। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কেবল একটি ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছিল।
Advertisement
এদিকে, মঙ্গলবার অক্সফোর্ডের সহযোগী ভ্যাকসিনটির প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি শূকরের দেহে পরীক্ষায় আশাব্যঞ্জক সাফল্য দেখিয়েছে। ভ্যাকসিনটি শূকরের দেহে এক ডোজের পরিবর্তে দুই ডোজ প্রয়োগ করায় তাতে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবডি তৈরি করে।
চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছেন মূলত ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। ভ্যাকসিনটির উন্নয়ন এবং উৎপাদনের জন্য বর্তমানে বিজ্ঞানীরা ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে কাজ করছেন।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, চলতি বছরের শেষ দিকে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতার ব্যাপারে তারা চূড়ান্ত তথ্য-উপাত্ত পাবেন বলে আশা করছেন। বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের অন্তত এক ডজন ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া আরও শতাধিক ভ্যাকসিন তৈরির বিভিন্ন ধাপে রয়েছে।
তবে করোনাভাইরাসের কোনও ভ্যাকসিনই এখন পর্যন্ত ব্যাপক পরিসরে পরীক্ষা উতড়ে যেতে পারেনি। কোনও ভ্যাকসিনের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেতে হলে শেষ অর্থাৎ তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফল হতে হবে। চীনের বিজ্ঞানীদের তৈরি অন্তত ছয়টি সম্ভাব্য করোনা ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।
এসআইএস/এমকেএইচ