প্রবাস

পাঁচ মাস হাসপাতালে কাটিয়ে বাংলাদেশির করোনাজয়

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রাজু সরকার সিঙ্গাপুরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে একটি পরিচিত নাম। তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য সরকার, চিকিৎসক, নার্সরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তিনি দুইমাস আইসিইউতে ছিলেন। চিকিৎসা ব্যয়ও দেশটির সরকার বহন করে মহত্বের পরিচয় দিয়েছে।

Advertisement

রাজু সরকার শুক্রবার চিকিৎসা নিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। সিঙ্গাপুরের দৈনিক পত্রিকা ‘দ্য স্ট্রেইট টাইমস’ তাকে নিয়ে আজ একটি কলাম প্রকাশ করেছে। বলা হয়েছে, ‘তিনি কয়েকবার মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়েছিলেন। তবে তিনি কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞ ছিলেন’।

জানা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে তিনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন তার স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। তিনি প্রথম সন্তানের পিতা হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। ২৬ জুন রাজু সরকার দেশটির টান টক সেনগ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। একজন বাবা নতুন জীবন পেয়েছেন। তার ছেলের জন্ম হয়েছিল ৩০ শে মার্চ।

৩৯ বছর বয়সী এই বাংলাদেশি প্রায় পাঁচ মাস হাসপাতালে কাটিয়েছিলেন, যার অর্ধেক সময়ই আইসিইউতে ছিলেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পরে তিনি থাম্বস আপ সাইন দেখিয়ে স্ট্রেইট টাইমসকে বলেন, ‘তিনি প্রথমে যা করতে চান তা হলো হলো কিছু খাসির মাংস দিয়ে ভাত খাওয়া’।

Advertisement

করোনাভাইরাসে সংক্রমণকারী প্রথম কয়েকজন বিদেশিকর্মীর মধ্যে তিনি ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে হাসপাতালে ভর্তি হন। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে তাকে টিটিএসএইচের পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। আইসিইউতে এতদিন থাকার পরে তার নাটকীয়ভাবে সুস্থ হয়ে উঠা চিকিৎসকদের অবাক করে দিয়েছিল।

ড. হো বলেন, ‘রাজু সরকার খুব অসুস্থ ছিলেন। যখন তাকে প্রথমবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং দু-তিনবার মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়েছিলেন। তার রক্তচাপ কমতে শুরু করেছিল। আমরা ভেবেছিলাম তার দীর্ঘমেয়াদী অক্সিজেনের সহায়তা প্রয়োজন হবে এবং আমরা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। রাজু সরকার সব থেকে বেশি আক্রান্ত হয়েছিলেন, বলা যায় মৃত্যুর হাত থেকে তিনি বেঁচে গেছেন’।

তিনি বলেন, ‘পুনর্বাসন কেন্দ্রে তিনি শক্তি এবং কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস তৈরির জন্য ফিজিওথেরাপি করেছিলেন। আইসিইউতে দীর্ঘদিন থাকার কারণে তিনি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তবে তিনি অত্যন্ত অনুপ্রাণিত ছিলেন। নিজের অনুশীলন করতে আগ্রহী ছিলেন। নিজে থেকে সেরে উঠলেন এমনকি ওয়ার্ডে বিশ্রাম নেওয়ার সময় নিজের ব্যায়াম করেছিলেন। এছাড়া নিজ দায়িত্বে প্রতিদিন তিনি প্রায় দুই ঘণ্টা করে ব্যায়াম করতেন’।

শুক্রবার সিনিয়র স্টাফ নার্স চার্মাইন লোহ জানিয়েছেন, রাজু সরকার খুব কৌতূহলী ছিলেন। তিনি বলতেন কেন এমনটি হয়। আমি অবশ্যই ভালো হয়ে উঠব। তিনি আমাদের অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেতেন। আমরা তাকে কীভাবে নিজের যত্ন নেওয়া যায় সেই বিষয়ে শেখানোর চেষ্টা করেছি।

Advertisement

তার সুস্থ হওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় প্রেরণা ছিল তার পরিবার। তার অবস্থার উন্নতির এক সপ্তাহ পরে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে প্রথম তিনি তার সন্তানকে দেখেছিলেন। তখন তাকে আইসিইউ থেকে বের করে একটি সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।

রাজু সরকার স্ট্রেইট টাইমসকে বলেন, ‘আমার ছেলে যখন ঘুমাচ্ছিল তখন আমি তার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। বাচ্চা আমার মুখ দেখলেই কান্না করবে। নার্সরা বলেছে সবসময় তার ফোনে পরিবারের ফটো দেখেন এবং ঘন ঘন বাড়িতে কল করতেন’।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার ছেলে ও স্ত্রীকে দেখতে চাই। আমি (আশা করি) তিন বা চার মাসের মধ্যে (বাড়িতে) যেতে পারব। তার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার এখনও দীর্ঘ পথ বাকি। তিনি এখন দুই মাসের জন্য মেডিকেল ছুটিতে রয়েছেন এবং ফলোআপ ভিজিটের জন্য তাকে হাসপাতালে ফিরতে হবে।

সিনিয়র নার্স ম্যানেজার ম্যাগডালেন লিম, যিনি তার দেখাশুনা করা নার্সদের মধ্যে একজন ছিলেন। রাজু যখন হাসপাতাল ছেড়েছিলেন তখন তিনি বিদায় জানাতে গিয়ে তার সুস্থ হওয়া সম্পর্কে বলেন, ‘এটি একটি সুন্দর সাফল্যের গল্প। তিনি খুব পরিশ্রমী ছিলেন। হাসপাতাল ছাড়ার সময় রাজু সরকার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ’।

এমআরএম/এমকেএইচ