শিক্ষা

করোনার ছুটিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা কমেছে ৮০ শতাংশ

করোনার প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় উল্লেখযোগ্য হারে কমছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সময়। বিআইজিডির গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য। আগে যেখানে গ্রামের শিক্ষার্থীরা দিনে স্কুল, কোচিং ও বাড়িতে নিজেদের পড়ালেখা মিলে ১০ ঘণ্টা ব্যয় করতেন, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ২ ঘণ্টায়। অর্থাৎ ৮০ শতাংশ সময় কমেছে পড়াশোনার। বুধবার (২৫ জুন) ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) আয়োজিত একটি ওয়েবিনারে গবেষণার এসব ফলাফল তুলে ধরা হয়।

Advertisement

গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনে ‘ঘরে বসে শিখি’ ও ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ এই দুইটি অনুষ্ঠান দেখছেন এবং এক শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছেন। যারা টিভি ক্লাসে অংশগ্রহণ করছেন তারা আবার টেলিভিশনে ক্লাস অনুসরণ করাকে বেশ কঠিন বলে মনে করছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এই সময় পড়াশোনার সময় কমার বিপরীতে বেড়েছে শিশু শ্রমের হার। গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের আগে যেখানে চার শতাংশ শিক্ষার্থী দুই ঘণ্টার বেশি আয়মূলক কাজে জড়িত ছিল এখন তার হার দাঁড়িয়েছে ১৬ শতাংশে। এই তথ্যগুলো, গ্রামের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে। শহরের বস্তি এলাকায়ও এ চিত্র মোটামুটি একই রকম।

বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন বলেন, ‘আমাদের দেশের মূল শক্তি হলো কমিউনিটি-ভিত্তিক উদ্ভাবনী পদক্ষেপ। মহামারি-সৃষ্ট অনেক সমস্যা মোকাবিলায় আমাদের এই মূল শক্তিটিকে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। সেটা হতে পারে সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পে কিংবা শিক্ষা খাতে ডিজিটাল ব্যবস্থার উদ্ভাবনে। আমাদের অবশ্যই হাতে হাত মিলিয়ে এ ব্যাপারে কাজ করতে হবে। কমিউনিটি নির্ভর বহুমাত্রিক পদক্ষেপ যা এনজিওগুলোর উদ্যোগে পরিচালিত এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যবস্থার উদ্ভাবনে সরকারি নীতিকে আমলে নিতে হবে। বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবারের শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থায় থাকা বাধাগুলোকে এভাবেই অপসারণ করা প্রয়োজন।’

Advertisement

গবেষক নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশের শিশুদের পড়াশুনায় ব্যয় করা সময় ১০ ঘণ্টা থেকে কমে ২ ঘণ্টায় নেমে গেছে। গ্রামের বাচ্চারা এখন পরিবারের কাজের পেছনে দ্বিগুণ সময় ব্যয় করছে। শিক্ষামূলক কার্যক্রমে সময় না দিয়ে অ-শিক্ষামূলক কার্যক্রমে বেশি সময় দেয়ায় যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পূরণ করা কষ্টসাধ্য। বাস্তবে স্কুল বন্ধ হওয়ায় ৬ ঘণ্টা বা ৫০ শতাংশ বেঁচে যাওয়া সময় আমাদের গবেষণায় ‘অ-গ্রহণীয়’। পরবর্তী ধাপে, আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা করব।’

করোনা প্রাদুর্ভাবে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কবে থেকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রভাব ও অনলাইনে পাঠ গ্রহণের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা কীভাবে মানিয়ে নিতে পারছে তা দেখতে এই গবেষণাটি করেছে বিআইজিডি। মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. নিয়াজ আসাদুল্লাহ, বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট অনিন্দিতা ভট্টাচার্য, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মনতাজিমা তাসনিম এবং রিসার্চ ইন্টার্ন ফারজিন মুমতাহেনা বাংলাদেশের শহরের বস্তি ও গ্রাম এলাকার ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ওপর এই গবেষণাটি করেছেন।

ওয়েবিনারে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আসাদুল্লাহ গবেষণায় প্রাপ্ত ফল উপস্থাপন করেন। এরপর প্যানেল আলোচনা ও উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন আলোচকেরা। ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, ব্র্যাক শিক্ষা কার্যক্রমের পরিচালক ড. শফিকুল ইসলাম, ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের (বিআইইডি) সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব মোর্শেদ প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন।

এমএফ/এমএস

Advertisement