অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পর গত দুই দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কমেছে। দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১০ ডলার কমে গেছে। তবে সপ্তাহ ও মাসের ব্যবধানে এখনও স্বর্ণের দাম বেশি।
Advertisement
এদিকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দরপতনের পর তেলের দাম কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতে মাসের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।
ইতিহাসের সর্বোচ্চ দরপতনের কারণে গত ২০ এপ্রিল প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ঋণাত্মক ৩৭ ডলারের নিচে নেমে যায়। রেকর্ড এই দরপতনের পরে তেলের দাম বাড়তে থাকে। এতে গত সপ্তাহে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৪০ ডলারে ওঠে।
এরপর কিছুটা দাম কমলেও শুক্রবার লেনদেনের শুরুতে আবার দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এদিন ১ দশমিক ২৭ শতাংশ দাম বেড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৩৯ ডলারে উঠেছে। এরপরও সপ্তাহের ব্যবধানে তেলের দাম ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে ৩৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ কম। অবশ্য মাসের ব্যবধানে তেলের দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
Advertisement
এদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণ কিনে মজুত করায় চলতি বছরের শুরু থেকেই দাম বাড়ছে। দফায় দফায় দাম বেড়ে গত বুধবার (২৪ জুন) প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড ১৭২ ডলার পর্যন্ত ওঠে।
তবে এর পর থেকেই স্বর্ণের দাম কমতে থাকে। বৃহস্পতিবার দাম কমে ১৬২ ডলারে নেমে আসে। শুক্রবার লেনদেনের শুরুতেও স্বর্ণের দামে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দেয়। এতে দাম কমে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৬০ ডলারে নেমে এসেছে।
দুই দিনে এমন দরপতন হওয়ায় পরও সপ্তাহ ও মাসের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম এখনও বেশি রয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম বেড়েছে দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং মাসের ব্যবধানে ৪ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে বর্তমানে স্বর্ণের দাম বেশি ২৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১৪৫৪ ডলার। এরপর করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬০ ডলারে ওঠে।
Advertisement
তবে মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে বড় পতন হয়। এক ধাক্কায় দাম কমে প্রতি আউন্স ১৪৬৯ ডলারে নেমে আসে। মার্চে দরপতন হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় নেয়নি।
দফায় দফায় দাম বেড়ে মে মাসে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড ১৭৪৮ ডলারে উঠে যায়। এরপর ছোট খাটো উত্থান-পতন হলেও গত দুই সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে বড় উত্থান ঘটে।
আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ায় গত সোমবার বাংলাদেশে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সাধারণত ভরিতে এক-দেড় হাজার টাকা করে বাড়ানো হলেও এবার এক লাফে ভালো মানের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ৭১৫ টাকা বাড়ানো হয়। মঙ্গলবার থেকে দেশের বাজারে স্বর্ণের এই বাড়তি দাম কার্যকর হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ৭১৫ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ৯০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৬ হাজার ৭১৮ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৭ টাকা বাড়িয়ে ৫৭ হাজার ৯৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতিতে স্বর্ণের দাম তিন হাজার ৬১৬ টাকা বাড়িয়ে ৪৭ হাজার ৬৪৭ টাকা।
স্বর্ণের এই দাম বাড়ানো সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বরাত দিয়ে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে স্বর্ণের মূল্য সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। ফলে দেশের বাজারে স্বর্ণের মূল্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এমএএস/এমএসএইচ/এমকেএইচ