বেশ কিছুদিন থেকেই লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম পাপুলের নাম আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে উঠে আসছে বারবার। সম্প্রতি মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার হয়েছেন এ বাংলাদেশি এমপি। বিষয়টি এবার উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবপাচার বিষয়ক প্রতিবেদনেও।
Advertisement
‘ট্রাফিকিং ইন পার্সন রিপোর্ট ২০২০’ নামের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুয়েতি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে ২০ হাজার বাংলাদেশিকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কুয়েতে নিয়ে যান এমপি পাপুল। কিন্তু সেখানে তাদের যে চাকরি দেয়ার কথা ছিল, বেশিরভাগই সেই চাকরি পাননি। যে বেতনের কথা বলা হয়েছিল, তারা তার চেয়ে কম বেতন পেয়েছেন বা একদমই পাননি। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বেশ কয়েকবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়ার চাকরিদাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে মিলে দুই দেশের কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের ঘুষ দিয়ে বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানোর বিষয়টিতে একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি করেছিল। তারা মালয়েশিয়া যেতে শ্রমিকদের কাছ থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে। যদিও এর জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ছিল মাত্র ৩৭ হাজার টাকা। এর ফলে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকরা আরও অরক্ষিত হয়ে পড়ে এবং ঋণে জর্জরিত হয়। হাইকোর্টের কাছ থেকে দু’বার সতর্কবার্তা পাওয়ার পর গত নভেম্বরে সরকার তাদের তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেয়। এর শুনানি এখনও বাকি রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৬ জুন কুয়েতের মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে পাপুলকে গ্রেফতার করে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। গত বুধবার পাপুলকে ২১ দিন কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল।
Advertisement
বাংলাদেশি এ সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত ও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে যাচ্ছে কুয়েতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কুয়েতি সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, এমপি পাপুলের প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ কুয়েতি দিনার। এর মধ্যে ৩০ লাখই হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের মূলধন। মানবপাচার, অবৈধ ভিসা বিক্রি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ ওঠায় এমপি পাপুল ও তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে, অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর আরও অনুসন্ধানের স্বার্থে সংসদ সদস্য ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক শহিদ ইসলাম পাপুলকে সপরিবারে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত ৯ জুন বাংলাদেশে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের পাঠানো চিঠিতে পাপুল, তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টিআইএন নম্বর, আয়কর রিটার্নসহ ব্যক্তিগত সব নথিপত্র তলব করা হয়। কিছু নথি দুদকে পৌঁছালেও বেশ কিছু অত্যাবশ্যক নথিপত্র পায়নি সংস্থাটি। সে জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন সংস্থাটি।
কেএএ/এমএস
Advertisement