রাজশাহীর পদ্মায় দীর্ঘদিন পর সুস্বাদু জাতের ইলিশ মাছ ধরা পড়ায় জেলেদের পাশাপাশি এ অঞ্চলের ক্রেতারাও বেজায় খুশি। পদ্মায় ইলিশ আসায় রাজশাহীর জেলেরা মাছ ধরা ও বিক্রিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তাই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক মাছ ব্যবসায়ী ইলিশ মাছ কিনতে এখানে ছুটে আসছেন। তবে, বর্তমানে পদ্মার উজানে থাকা জেলার পবা, গোদাগাড়ী, বাঘা, চারঘাট ও বাগমারা উপজেলায় ইলিশ ধরার নামে ব্যাপকহারে জাটকা মাছ ধরা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মণ জাটকা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারি নজরদারি বাড়ানো ও জাটকা নিধন বন্ধ হলে এসব পয়েন্টে আগামী বছর বড় বড় ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, সংরক্ষণ প্রচেষ্টার ফলে বঙ্গোপসাগরে ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপুল পরিমাণ ইলিশ রাজশাহী অঞ্চলের পদ্মায় চলে এসেছে। প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞার ইতিবাচক ফল হিসেবে এলাকায় এবার প্রচুর পরিমাণ ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে।জেলার চারঘাট উপজেলার পদ্মার তীরে বসবাসকারী জেলে আব্দুল লতিফ জাগো নিউজকে জানান, গত ১৪-১৫ বছর পর রাজশাহীর পদ্মায় আবারো দেখা মিলেছে রূপালী ইলিশের। তবে, এক শ্রেণির অসাধু জেলেরা ইলিশ ধরার নামে নির্বিচারে জাটকা নিধন শুরু করেছে। ফলে আবারও পদ্মা থেকে সুস্বাদু মাছ ইলিশ হারিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। গোদাগাড়ি উপজেলার জেলে রশিদ মিঞা জাগো নিউজকে জানান, গত বছরই প্রথম তাদের জালে ধরা পড়ে ইলিশ। সে বছরের তুলনায় এবার পদ্মা নদীতে ইলিশের পরিমাণ আরও বেড়েছে। ১৫ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকার পর গত ৯ অক্টোবর ইলিশ শিকারে বাঁধা কাটে। এসময় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকায় মা ইলিশ উজান বেয়ে রাজশাহীর পদ্মায় আসতে পেরেছে। আর এ কারণেই জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে। তবে আকারে ছোট হলেও পেটের দায়ে এই অঞ্চলের জেলেরা সেই মাছ শিকার করছেন বলে জানান তিনি।বাগমারার জেলে সোহবার আলী জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে নদীর তীরেই ২শ থেকে ৩শ টাকা কেজি দরে ইলিশ (জাটকা) বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এখান থেকে নিজস্ব মোকামে নিয়ে বেশি দামে সেই মাছ বিক্রি করছেন। মাছের ওজন ২শ থেকে সাড়ে ৩শ গ্রামের মধ্যে এবং আকারে নয় ইঞ্চির চেয়ে ছোট। এরপরও জীবিকার তাগিদে জেলেরা কারেন্টজাল দিয়ে ইলিশ শিকার করছেন বলে জানান তিনি। রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক ড. সরোয়ার জাহান জাগো নিউজকে জানান, ‘তিনি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেননি। পদ্মায় বিপুল পরিমাণ ইলিশ মাছ দেখছেন। তাই কোনো চিন্তা না করেই এক ডজনেরও বেশি ইলিশ কিনেছেন তিনি। ১৯৯০ দশকের শুরু থেকেই রাজশাহী অঞ্চলের পদ্মায় ইলিশের বিচরণ হ্রাস পায়। এর মূল কারণ জাটকা নিধন। এর মাঝে কিছু সময় ইলিশ ধরাতে সরকারি নজরদারি বাড়ানোর ফলে আবারো পদ্মায় দেখা মিলেছে ইলিশের। এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী জাগো নিউজকে জানান, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ দিন ইলিশ মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে ইলিশ প্রজননে সাফল্য দেখা গেছে। ফলে, গত ১০ অক্টোবর থেকে এ অঞ্চলের প্রায় ২ হাজার জেলে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ মণের বেশি ইলিশ মাছ ধরছে। আর জাটকা নিধন বিরোধী অভিযান আগামী পহেলা নভেম্বর থেকে শুরু হবে। এসময় জেলার বিভিন্ন উপজেলার পদ্মা নদীতে জেলেদের জাটকা নিধন করতে দেখা গেলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা হবে। শাহরিয়ার অনতু/এমজেড/পিআর
Advertisement