যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের বেশিরভাগ শহরে গ্রীষ্মের মধ্য-দুপুরে ১১ থেকে ৩৪ মিনিটের মতো সূর্যের আলোতে এলে নতুন করোনাভাইরাস ৯০ শতাংশ কিংবা তারও বেশি নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। নতুন এক গবেষণায় এমন তথ্য মিলেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন দুই বিজ্ঞানী।
Advertisement
যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত দু'জন বিজ্ঞানী ডা. জোসে-লুইস স্যাগরিপ্যান্তি ও ডা. সি ডেভিড লিটল ফটোকেমিস্ট্রি এবং ফটোবায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে এই দাবি করেছেন। মার্কিন সামরিক বাহিনী এবং ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে কাজ করা সাবেক এ দুই বিজ্ঞানীর মতে- লকডাউন প্রকৃতপক্ষে নাগরিকদের ক্ষতিই করছে; বিশেষ করে যারা ভাইরাস নিস্ক্রিয় করতে সক্ষম সূর্যের আলোতে আসেন না তাদের।
করোনাভাইরাস উচ্চ তাপমাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শীতকালে বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করেন, মার্কিন এ দুই বিজ্ঞানীর গবেষণা তাদের সেই ধারণা জোরাল করতে পারে। অতিবেগুণী আলোকরশ্মি- যা সূর্যের আলোতেও মেলে, বর্তমানে তা নিউইয়র্ক শহরের ভূগর্ভস্থ পথ জীবাণুমুক্ত করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
অনেক বিজ্ঞানীর দাবি- করোনাভাইরাসকে মেরে ফেলার জন্য যে মাত্রার অতিবেগুণী রশ্মি দরকার তা মানুষের জন্য অনিরাপদ এবং গ্রীষ্মের সূর্যের আলো ভাইরাসকে ধীরগতির করতে পারে; মহামারি থামাতে পারে না।
Advertisement
কিন্তু ডা. জোসে-লুইস স্যাগরিপ্যান্তি ও ডা. সি ডেভিড লিটল জোর দিয়ে বলেছেন, সূর্যের আলো আমাদের নিরাপদ রাখবে। এ দুই বিজ্ঞানীর কথার সুর শোনা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কণ্ঠেও। এর আগে তিনি বলেছিলেন, উষ্ণ আবহাওয়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে তাড়িয়ে দেবে।
ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তারা বলেছেন, গবেষণাটি বেশ মজার। তবে ল্যাবরেটরির তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে বাস্তব দুনিয়ার সরাসরি মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। এই গ্রীষ্মের রোদ আমাদেরকে সংক্রমণ থেকে বাঁচাবে; সে সম্ভাবনাও খুব বেশি নয়।
টেক্সাসের এঅ্যান্ডএম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী ডা. বেন নিউম্যান বলেন, এতে সামান্য বৈজ্ঞানিক সত্যতা রয়েছে। কিন্তু এটি এমন কোনও সত্য নয়; যা সংক্রমণের হারে পার্থক্য আনতে পারে।
তিনি বলেন, সূর্যের আলো আশপাশে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভাইরাসকে নষ্ট করে। কিন্তু যখন কারও মুখ অথবা নাকের মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করে; সেক্ষেত্রে ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারে না।
Advertisement
করোনাভাইরাস নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা করেছেন ডা. নিউম্যান। তিনি বলেন, অতিবেগুণী রশ্মি সরাসরি উন্মুক্ত ভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে; তবে সংক্রমিত মানুষের নাক বা মুখে থাকা কণায় ভাইরাসটি নিষ্ক্রিয় করতে খুব বেশি কার্যকর নয়।
গবেষকরা বলেছেন, ডিসেম্বর এবং মার্চের মধ্যে অধিকাংশ শহরে ভাইরাসটি সংক্রামক থাকতে পারে একদিন কিংবা তারও বেশি। তবে গ্রীষ্মের মধ্য-দুপরের রোদে ১১ থেকে ৩৪ মিনিটের মধ্যে ৯০ শতাংশ অথবা ততোধিক নিস্ক্রিয় হতে পারে ভাইরাসটি। বিশ্বের অনেক শহরে এই চিত্র দেখা যেতে পারে বলে গবেষকরা ধারণা করলেও শহরগুলোর নাম প্রকাশ করেননি তারা।
এসআইএস/এমএস