জাতীয়

সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি

নতুন বেতন স্কেল পুনর্নির্ধারণ এবং মাঠপর্যায়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের খবরদারি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি। কমিটির তাদের অভিযোগ, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সুবিধা বাড়াতে বেতন স্কেল থেকে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করা হয়েছে।আগামী ৮ নভেম্বরের মধ্যে ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য’ দূর না করলে কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেয়া হয়েছে। শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এ হুমকি দেয় প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি।সমাবেশে ঘোষণা করা হয়, সরকারি প্রকৌশলী, কৃষি ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং প্রশাসন ছাড়া অন্যান্য বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তারা এখন থেকে একযোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা সমাবেশে অংশ নেন।সমাবেশে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম দাবি আদায়ে ১১ দিনব্যাপি বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বুধবার (২৮ অক্টোবর) দেশের সব উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয়ভাবে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত মানববন্ধন, ৫ নভেম্বর উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং এই সময়ের মধ্যে জনপ্রতিনিধি ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা।৮ নভেম্বরের মধ্যে দাবি মানা না হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল, ইউএনও’র ক্ষমতা কমিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতায়ন, নিজস্ব ক্যাডার ও ফাংশনাল সার্ভিস বহির্ভূত সব ধরনের প্রেষণ বাতিল এবং সব ক্যাডার ও ফাংশনাল সার্ভিসে পদোন্নতির সমান সুযোগের দাবি জানান তিনি।বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, একটি মহল ২৬টি ক্যাডারের সঙ্গে বৈষম্য তৈরি করেছে, রাস্তায় নামতে বাধ্য করছে। এর মাধ্যমে তারা একটি গতিশীল গণতান্ত্রিক সরকারের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়।উপজেলা পরিষদের কাছে ১৭ দফতর হস্তান্তরের বিষয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১৪ অক্টোবর একটি অফিস স্মারক জারি করা হয়। এতে বলা হয়, উপজেলা পরিষদে ন্যস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক ব্যয়ের হিসাব এবং উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হিসাব উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনওর স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে।সমাবেশ থেকে ইউএনওর স্বাক্ষরসংক্রান্ত এই আদেশ বাতিল করার দাবি জানান প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির নেতারা।সমাবেশে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান ফরাসউদ্দিন বললেন, কমিটির সুপারিশে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বিষয়টি সচিব কমিটি বাতিল করেছে। সরকারি চাকরি বিধিতে সচিব কমিটি বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই, অথচ তারা বাতিল করে দিল! সুপারিশ পরিবর্তনের ক্ষমতা তো শুধু মন্ত্রিসভার থাকার কথা। আমরা অবিলম্বে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানাই।তিনি বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের জন্য সবকিছু চাচ্ছেন আর অন্যদের হেনস্তা করছেন। দিনে দিনে তারা ফ্রাঙ্কেস্টাইন হয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে, কয়েক দিন পর তারা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে মন্ত্রীর ওপর পদমর্যাদা চেয়ে বসবেন।বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নাসরিন বেগম বলেন, বেতন কমিশনের সুপারিশ পরিবর্তন করে তারা ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। পরিবর্তন করার থাকলে সেটা মন্ত্রিসভা করত। তারা (সচিব কমিটি) নিজেদের আরও উপরে উঠানোর ব্যবস্থা করল, সুপার গ্রেড দিল। কিন্তু অন্য ক্যাডারে গ্রেড না বাড়িয়ে অবনমন করা হয়েছে।অধ্যাপক নাসরিন বেগম বলেন,  তারা এখন সুপারম্যান হয়ে উঠছেন, আর আমাদের ভাবছেন আম-আদমি। তাদের বোঝা উচিত আম-আদমিরা এক হলে সুপারম্যানরা ধ্বংস হয়ে যাবে। শিক্ষা ক্যাডারের সাড়ে ১৫ হাজার শিক্ষক ও কর্মকর্তা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মাঠে থাকবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব সলিমউল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, আমরা যতই উপরে উঠি না কেন আমাদের চতুর্থ গ্রেডেই থাকতে হবে। কোনোভাবেই তৃতীয় গ্রেডে যেতে পারবো না। ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষও আসবেন প্রশাসন ক্যাডার থেকে। আমরা এটা কোনোভাবে হতে দিতে পারি না।বিএমএ সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান বলেন, বেতন স্কেলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের যে সুবিধা আগে পাওয়া যেত সেটা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা কোনো নতুন দাবি নিয়ে আসিনি, আগে পাওয়া সুবিধা প্রত্যাহারের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সভাপতি প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, নতুন বেতন স্কেলে মাত্র একটি ক্যাডারই উপকৃত হবে। আর বাকি সবাইকে অবনমন করা হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে ট্যাক্স কালেকশনের জন্য নিয়োগ দেয়া হতো এই অফিসারদের, পরে আসে তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার। এখন তারা সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে চাইছেন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও নাকি তাদের হাত দিয়েই হতে হবে! এভাবে চলতে পারে না।সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিসিএস সমন্বয় কমিটির নেতা শ ম গোলাম কিবরিয়া, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সহসভাপতি মোবারক আলী, বিসিএস সমন্বয় কমিটির সহসভাপতি তাসাদ্দুক আহমেদ, বিসিএস সড়ক ও জনপদ সমিতি সভাপতি মনির হোসেন, বিসিএস হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সেলিম রেজা, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সহসভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্মিলিত সরকারি কর্মকর্তা পরিষদ সভাপতি শফিউল আলম, বিসিএস কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খাইরুল আলম প্রিন্সসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।বিএ

Advertisement