মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে চলছে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক। কেউ বলছেন ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসীদের সুযোগ দিতে হবে। আবার কেউবা বলছেন, বিদেশি নয় স্থানীয়দের বেকারত্ব হ্রাসের পথেই হাঁটছে সরকার।
Advertisement
এরই মধ্যে সরকার ঘোষণা দিয়েছে, এ বছর বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেবে না। তবে বিগত রি-হিয়ারিং প্রোগ্রামের নামে বিদেশি অবৈধকর্মীদের কাছ থেকে নেয়া সাড়ে হাজার কোটি টাকা হজম করা হয়েছে। সেদিক বিবেচনা করে প্রতারিত অবৈধ কর্মীদের বৈধ করার দাবি উঠেছে। যদিও সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার দায় সরকার নিতে চায় না। বিভিন্ন সময়ে দু’দেশের আলোচনায় ও উঠে এসেছে বিষয়টি।
আশ্বাস পেলেও সরকারের পটপরিবর্তনে আলোর পথ দেখেনি বিষয়টি। গত ১৬ জুন দেশটির মন্ত্রী ঈসমাইল হোসেন সাবরির সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলাম। সে বৈঠকেও অবৈধ বাংলাদেশিদের বিষয়ে আলোচনা হয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মরত বিদেশি কর্মীদের চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে যাবার যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সে সময়ে নিয়োগকর্তা পরিবর্তন করার সুযোগ প্রদান করায় মালয়েশিয়া সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
তিনি মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন কারণে অবৈধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের বৈধতা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন। গত ২২ জুন মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফেসবুক পেজের এক নোটিশে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া সরকার করোনাভাইরাস পরিস্থতির কারণে যে সমস্ত কোম্পানি বন্ধ হয়েছে বা কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে সে সমস্ত কোম্পানির বিদেশিকর্মীদের একই সেক্টরে নিয়মানুযায়ী কোম্পানি/নিয়োগকর্তা পরিবর্তন করার সুযোগ প্রদান করেছে।
Advertisement
এই কর্মী পরিবর্তন প্রক্রিয়া বর্তমান নিয়োগকারী কোম্পানি/নিয়োগকর্তা এবং নিয়োগ দিতে ইচ্ছুক কোম্পানি/নিয়োগকর্তা উভয়ের মধ্যে চুক্তি করে যৌথভাবে মালয়েশিয়া সরকারের লেবার ডিপার্টমেন্ট এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সম্পাদন করবে। বাংলাদেশি কর্মীদের এককভাবে কোম্পানি পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে হাইকমিশন।
এক্ষেত্রে ওই সমস্ত কোম্পানির নামে ভিসাধারী বাংলাদেশি কর্মীদের হাইকমিশনের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। একই সাথে সে সমস্ত কোম্পানি নিয়মানুযায়ী কর্মীদের নিয়োগ দিতে ইচ্ছুক সেসব কোম্পানির বিষয়েও হাইকমিশনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেছে হাইকমিশন।
এদিকে বেকারত্ব ঘোঁচাতে মালয়েশিয় সরকার কোভিড-১৯ পরবর্তী এইচআরডিএফ পেনজানা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৪০ হাজার স্থানীয় কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। ২২ জুন পেনজানা প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় আগামী ছয় মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে বলছিলেন, ‘মানবসম্পদ মন্ত্রী। আর এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৫০ মিলিয়ন রিঙ্গিত বরাদ্দ দিয়েছে সরকার’। শুরুতেই পেনজানা প্রকল্পের অধীনে, ২০ হাজার কর্মীর চাকরি দিচ্ছে ১০টি সংস্থা। এই ১০টি সংস্থা এইচআরডিএফের দেওয়া পাঁচটি কৌশলের মাধ্যমে চাকরি এবং দক্ষতা প্রশিক্ষণ দেবে।
Advertisement
সংস্থাগুলি হচ্ছে- মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল টেক অ্যাসোসিয়েশন (পিকম); তেনাগা নেশনাল ভিড (টিএনবি); মালয়েশিয়া ডিজিটাল অর্থনীতি (এমডিইসি); ব্রিকফিল্ডস এশিয়া কলেজ; ফেডারেশন অব মালয়েশিয়ার ম্যানুফ্যাকচারার; সেভেন এলিভেন; এ ই অন; গ্রাভ; কেলি; এবং পরিচর্যা বিভাগ।
করোনায় স্থানীয়দের মধ্যে ‘যারা চাকরি হারিয়েছেন বা স্নাতক পাশ করা যুবক এখনও বেকার রয়েছেন তাদের অবশ্যই চাকরি পাওয়ার এবং দক্ষতার উন্নতি করার এই সুযোগটি গ্রহণ করতে হবে যাতে তারা চাকরির বাজারে টিকে থাকতে পারে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চাকরি পেতে এবং দক্ষতার প্রশিক্ষণ পেতে আগ্রহী মালয়েশিয়ানদের ww w.penjanahrdf.com.my এ নিবন্ধন করতে হবে। গত ২২ জুন সোমবার থেকে নিবন্ধন শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মালয়েশিয়ার অর্থমন্ত্রী টেংকু দাতুক সেরি জাফরুল আবদুল আজিজ বলেছেন, কোভিড-১৯ এবং দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব মোকাবিলায় সরকার মজুরি ভর্তুকি কর্মসূচি বাস্তবায়নে, ২.৪ মিলিয়ন চাকরি সাশ্রয় করেছে।
‘যদিও মালয়েশিয়ার বেকারত্বের হার হ্রাস করার লক্ষ্যে ২৬০ বিলিয়ন রিঙ্গিতের অর্থনৈতিক উদ্দীপনা (প্রিহ্যাটিন) প্যাকেজ চালু করেছে। মার্চ এবং এপ্রিলে কোভি -১৯, মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (এমসিও) এবং শর্তসাপেক্ষ নিয়ন্ত্রণ আদেশ (সিএমসিও) চলাকালীন অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্র বন্ধ হওয়ার কারণে এপ্রিল মাসে মালয়েশিয়ার বেকারত্বের হার বেড়েছে ৫.০ শতাংশ।
‘১৫ জুন থেকে পেনজানার আওতায় মজুরি ভর্তুকি কর্মসূচিটি প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে নিয়োগকর্তারা এখন তাদের বেতন-ভাতার ভর্তুকির জন্য আবেদন করতে পারবেন যারা তাদের অবৈতনিক ছুটিতে রয়েছেন।
‘এটিকে মাথায় রেখে অর্থনীতির প্রায় সকল ক্ষেত্র খোলার সাথে সাথে সরকার এই হারের উন্নতি করার লক্ষ্য নিয়েছে, বিশেষত এ বছরের তৃতীয় এবং চতুর্থ প্রান্তিকে। সুতরাং, পেনজানার অধীনে গৃহীত বিভিন্ন আপস্কিলিং কর্মসূচির লক্ষ্যও কর্মী বাহিনীর সক্ষমতা সংরক্ষণ করা, যাতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সাথে সাথে ব্যবসা খাত দ্রুত পুনরজ্জীবিত হতে পারে।
পেনজানার আওতায় যুবক ও বেকারদের দক্ষতা উন্নয়নের কর্মসূচি বাস্তবায়নে ২ বিলিয়ন রিঙ্গিত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আরও দুই লাখের অধিক ব্যক্তির উপকার হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে দেশটির অভিবাসন আটক কেন্দ্রে আটককৃতদের বিনাপয়সায় অভিবাসীদের নিয়োগের প্রস্তাবের কড়া সমালোচনা করেছে মালয়েশিয়ার ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেস (এমটিইউসি)। এমটিইউসির সেক্রেটারি-জেনারেল জে সলোমন বলছেন, বিদেশি শ্রম নিয়োগের বিষয়ে মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানানের ঘোষণার বিরুদ্ধে ছিল।
‘ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টার থেকে নিয়োগকারীদের শ্রমিক নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এমওএইচআর নীতিমালার সাথে মতবিরোধ করে কাজ করছে। যাতে দেশে অভিবাসী শ্রমিকদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা হ্রাস করতে পারে’।
এমটিইউসি বলেছে, বিদেশিকর্মী নিযুক্ত করার পদক্ষেপ হলো একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ যা অদক্ষ প্রবাসী শ্রমিকের উপর মালয়েশিয়ার নির্ভরতা যাচাই করতে সহায়তা করবে। সলোমন বলেছিলেন, বিদেশি শ্রমিকদের দেশে পাচারের জন্য মানবপাচারের বলয়, বিদেশি কর্মীদের গ্রহণ বন্ধ করার প্রস্তাবটি বাস্তবায়নে সরকারের মনোনিবেশ করা উচিত এবং একই সাথে বাস্তবায়নকে আরও কঠোর করা উচিত।
এমআরএম