ভ্রমণ

যেভাবে তৈরি করা হলো গাছবাড়ি

বনের মধ্যে হাতির পাল। মানুষ দেখে পালিয়ে যায় ময়ূর। শাল-পলাশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ঢেউ খেলানো লালমাটিতে বিছিয়ে আছে শুকনো পাতা। যেদিন আকাশে চাঁদ ওঠে, পুরো অঞ্চল ভেসে যায় জ্যোৎস্নায়। এমনই এক জায়গার নাম পুরুলিয়ার মাঠাবুরু। সেখানে গড়ে উঠেছে গাছবাড়ি পর্যটন কেন্দ্র।

Advertisement

জানা যায়, ভারতের বরাভূম স্টেশন থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে ‘কোকুবুরু’ আর ‘মাঠাবুরু’ নামে দুটি পাহাড়। বন-পাহাড়ি পথে নেমে যেতে হবে গাড়ি থেকে। বনের ভেতর দিয়ে সামান্য এগোতেই চোখে পড়বে ‘টংবাড়ি’। গাছবাড়ির এমনই নাম এখানে। বাড়িগুলো সব গাছের উপর। তাই হয়তো এমন নাম।

২০১৬ সালে কলকাতার বরুণ ভট্টাচার্য ও গোবিন্দপুরের সুজিত কুমার বানজারা ক্যাম্পে এসে গাছবাড়ির পরিকল্পনা করেন। এ পরিকল্পনা সম্পর্কে বরুণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘স্থানীয় আদিবাসীদের থেকেই নামটি শেখা। গাছের মাথায় মাচা বেঁধে, সেখান থেকেই ফসল পাহারা দেন তারা। হাতি বা বুনো শুয়োর ঢুকলে ক্যানেস্তারা বাজান। রাতের পর রাত সেই মাচাতেই কাটান। আদিবাসীরা এ মাচাকে বলেন ‘টংবাড়ি’।

পর্যটকরা জানান, গাছবাড়ির আকর্ষণ হলো গা-ছমছমে অ্যাডভেঞ্চার। রাতের বেলা বন্য পরিবেশে গাছবাড়িতে রাত কাটানো মানে আজীবনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে নেওয়া। এখানে অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ অনেক। বন, পাহাড়—সবই এখানে উজাড় করে সাজিয়ে রেখেছে প্রকৃতি।

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, মায়ানমারের গাছবাড়ির আদলে বাড়িগুলো তৈরি হয়েছে গাছের ক্ষতি না করেই। ঘরগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। তবে ভোরে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙার সুযোগ রয়েছে। জানালা খুলতেই শীতের হাড়কাঁপানো হাওয়া আর মিষ্টি রোদ স্বাগত জানাবে। শহুরে দূষণ থেকে অনেক দূরে এক টুকরো অবসর যেন গাছবাড়ি।

টংবাড়ি ছাড়াও তাঁবুতে রাত কাটানোর সুযোগ রয়েছে। তাঁবুর ভেতরেই আছে এয়ারকুলার, রেফ্রিজারেটর, ফোল্ডিং চেয়ার ও হেডল্যাম্প। এর সঙ্গে ক্যাম্পের ভেতরেই মিলবে বার্মা ব্রিজ, নেট ক্লাইম্বিংয়ের সুযোগ। চাইলে শিখে নিতে পারেন রক ক্লাইম্বিং বা র্যা পেলিং। বন্য পথ ধরে বেরিয়ে পড়তে পারবেন সাইকেলে।

কখনো পাতা-নাচের আসর বসে ক্যাম্পের ভেতরেই। খাওয়া-দাওয়া একসঙ্গেই। তারপর কেউ উঠে পড়বেন টংবাড়ির মাথায়, কেউ থাকবেন তাঁবুতে। এ ছাড়া গাছে ঝোলানো দড়ির বিছানা বা খাটিয়ায় শুয়েও কাটিয়ে দিতে পারেন রাত। তবে, বেশি রাতে ক্যাম্পের বাইরে যাওয়া যাবে না। বন্য জন্তুর ভয়ও কিন্তু কম নয়।

পুরুলিয়ার মাঠাবুরু পাহাড়ে বরুণের গাছবাড়িতে গ্রীষ্মকাল ছাড়া যেকোনো সময় যাওয়া যায়। তবে বসন্তকাল অবশ্যই সেরা সময়।

Advertisement

বঙ্গদর্শন/এসইউ/এএ/এমকেএইচ