জাতীয়

হোটেল শ্রমিকদের প্রণোদনা দিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি

মহামারি করোনাভাইরাসের বিপর্যয় থেকে হোটেল শ্রমিক ও শিল্প বাঁচাতে হোটেল সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্রদান, রেশনিং ব্যবস্থা চালু, কাজ, খাদ্য ও সুচিকিৎসার দাবিতে সমাবেশ এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।

Advertisement

সোমবার (২২ জুন) বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর এই স্মারকলিপি দেয়া হয়।

স্মারকলিপি প্রদান করার আগে হোটেল সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য প্রণোদনা প্রদান, রেশনিং ব্যবস্থা চালু, কাজ, খাদ্য ও সুচিকিৎসার নিশ্চয়তার দাবিতে দেশব্যাপী সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারের শ্রম প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে ও জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দেয়া হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি জয়নাল আবদীন। বক্তব্য দেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফন্টের সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, প্রচার সম্পাদক সোলেমান মল্লিক, দফতর সম্পাদক মো. কাউছার হোসেন, সদস্য বাবুল হোসেন প্রমুখ।

Advertisement

বক্তারা বলেন, 'মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অন্যান্য শ্রমিক সেক্টরের মতো হোটেল সেক্টরের শ্রমিকরাও বিপর্যস্ত।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করায় বিশ্ব অর্থনীতি মহামন্দার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও বুভুক্ষাবস্থা সৃষ্টিসহ দুর্ভিক্ষ অবস্থা সৃষ্টির উপক্রম তৈরি হচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সরবরাহ চেইনের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো গভীরভাবে সম্পৃক্ত। ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা ও দুর্ভিক্ষ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমাদের দেশে এখনই বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। হোটেল শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ খাতে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মরত এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল রয়েছে তাদের পরিবার। ফলে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এ খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ।'

'অথচ এ খাতের মালিকদের শুধু মুনাফাকেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনা এবং শ্রমিকদের দায়িত্ব গ্রহণ না করার মানসিকতার কারণে এ সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের জীবন-যাপন আজ অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই দেশের হোটেল রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়ে এ খাতের কর্মরত শ্রমিকরা। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হোটেল মালিকরা শ্রমিকদের মজুরিসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান বন্ধ করে দেয়। এমনকি গত ঈদুল ফিতরের উৎসব বোনাসও প্রদান করেনি মালিকরা। করোনা দুর্যোগের বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মালিকরা শ্রমিকদের ছুটি প্রদান করেছেন। ফলে আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের সকলেরই স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক মজুরিসহ অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্য। কিন্তু মালিকরা তা প্রদান না করায় হোটেল সেক্টরের শ্রমিকরা খেয়ে না খেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে এক মানবেতর জীবন যাপন করছে।'

'অপরদিকে দেশের কর্মহীন হয়ে পড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য সরকার ত্রাণ, রেশন ও প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও অঞ্চলভিত্তিক তালিকা করে হোটেল শ্রমিকরা সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে তালিকা প্রদান করে। সে অনুযায়ী কোথাও কোথাও নামকাওয়াস্তে দুই একবার সরকার প্রদত্ত ত্রাণ পেলেও মূলত অধিকাংশ হোটেল শ্রমিক সরকারের ত্রাণ ও প্রণোদনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।'

Advertisement

তারা আরও বলেন, 'পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা আক্রান্ত এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা যাতে দুর্ভোগে না পড়ে সেজন্য সরকারের উদ্যোগে প্রত্যেকে শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে তাদের মজুরির বিপরীতে সমপরিমাণ অর্থ পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। দেশ করোনা ভাইরাসমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত হোটেল শ্রমিকদের বেতন সরকারিভাবে ১০০% পরিশোধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।'

এফএইচ/জেডএ/পিআর