বিশ্বময় মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সবার মাঝে এক ভীতি ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। এক্ষত্রে বলব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বা আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতনতা অবলম্বন করে চলতে হবে এবং এর পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা রাখতে হবে। সচেতনা ও আল্লাহর ওপর প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসই মানুষকে যাবতীয় মহামারি ও দুর্যোগ থেকে মুক্ত রাখতে পারে।
Advertisement
আমরা যদি নিয়ম-নীতি মেনে চলি এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি তাহলে তিনি আমাদের রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট। কেননা এ মহামারি থেকে একমাত্র তিনিই বিশ্ববাসীকে রক্ষা করতে পারেন, যিনি সবার সৃষ্টিকর্তা ও প্রভু-প্রতিপালক। তাই একজন মুমিন কখনই হতাশাগ্রস্থ হয় না বরং পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখে। যারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান। যেভাবে পবিত্র কুরআন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, এবং তিনিই সর্বোত্তম কর্মকর্তা।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৭৩)
আল্লাহর পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে যারা জীবন পরিচালনা করেন তাদেরকে আল্লাহ এমন স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করেন যা তারা কল্পনাও করতে পারে না। যেভাবে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-‘আর তিনি সেখান থেকে রিজিক দেন যেখান থেকে সে রিজিক পাওয়ার ধারণাও করতে পারে না। আর আল্লাহর ওপর যে ভরসা করে তিনি তার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেই থাকেন। আল্লাহ সব কিছুরই এক পরিমাপ নির্ধারণ করে রেখেছেন।’ (সুরা তালাক : আয়াত ৩)
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা যদি আল্লাহর ওপর যথাযথ ‘তাওয়াক্কুল’ করতে, তাহলে তিনি পাখিদের যেভাবে রিজিক দান করেন, তোমাদেরও একইভাবে রিজিক দান করতেন। পাখিরা অতি প্রত্যুষে খালি পেটে বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যায় ভরা পেটে বাসায় ফিরে আসে।’ (ইবনে মাজাহ ও তিরমিজি)
Advertisement
মুমিন বান্দাহ সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তাই আল্লাহ তাআলাও তাদের সাহায্যের জন্য ছুটে আসেন আর আল্লাহ যদি কাউকে রক্ষা করতে চান সেক্ষেত্রে কে আছে তাকে বাঁধা দেয়? আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-- ‘তোমরা যদি প্রকৃতই মুমিন হয়ে থাক, তাহলে একমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা কর।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ২৩)
- ‘যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করে থাকেন তবে কেউ তোমাদের ওপর বিজয়ী হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সহায়তা না করেন, তবে তিনি ছাড়া কে আছে যে তোমাদের সাহায্য করবেন? মুনিদের শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভর করা উচিত।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬০)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও আল্লাহর ওপর ভরসা করতেন এবং কিভাবে ভরসা করতে হয় তা তার উম্মাতকে শিখিয়ে গেছেন। তিনি শুধু আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে বসে থাকেননি বরং তাওয়াক্কুলের পাশাপাশি চেষ্টা-প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। কেউ যদি মনে করে যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে সারাদিন ঘরে বসে থাকবে, তবে কিভাবে তার কাজ সম্পন্ন হবে।
সুতরাং শুধু মুখে আল্লাহর ওপরে বসে থাকা মোটেও ঠিক নয়। আসলে হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকার নাম আল্লাহর ওপর ভরসা বা তাওয়াক্কুল নয়, বরং আল্লাহর দেয়া সুযোগ সুবিধা ও উপায় উপকরণসমূহ কাজে লাগিয়ে ফলাফলের জন্য তার ওপর নির্ভর করার নামই হচ্ছে তাওয়াক্কুল বা ভরসা বা আত্মবিশ্বাস। হাদিসে এসেছে-
Advertisement
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি আগে আমার উট বাঁধব, এরপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব, নাকি উট ছেড়ে দেব, এরপর তাওয়াক্কুল করব?’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘প্রথমে উটকে বেঁধে রাখ তারপর তাওয়াক্কুল কর।' (তিরমিজি)
চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও উপায়-উপকরণ অবলম্বন করার পাশাপাশি আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ ভরসা রাখলে আল্লাহ তার যে কোনো বান্দার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শই আমাদের জন্য যথেষ্ট।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের সময় মদিনায় যাওয়ার জন্য মক্কা থেকে রওনা হন। পরে ‘সওর’ নামক গুহায় আত্মগোপন করেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে হিজরতের ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন-'আমরা যখন ‘গারে সওরে’ ছিলাম তখন আমি ওপর দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম মুশরেকদের পা আমাদের মাথার ঠিক উপরে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! তাদের কেউ যদি নিজের পায়ের দিকে তাকায় তাহলেই আমাদেরকে দেখতে পাবে। তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘আমাদের দু’জন সম্পর্কে তোমার ধারণা কি হে আবু বকর! আল্লাহ আমাদের তৃতীয় জন। অর্থাৎ আমাদের সাহায্যকারী।’ (বুখারি ও মুসলিম)
‘সওর’ গুহার সেই কঠিন পরিস্থিতিতেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক আল্লাহর ওপরই পরিপূর্ণ ভরসা রেখেছিলেন এবং আল্লাহই তাদের সাহায্যের জন্য যথেষ্ট হয়েছিলেন।
তাই আসুন, বর্তমান করোনাভাইরাসের কঠিন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও আতঙ্কিত না হয়ে কুরআন সুন্নাহ নির্দেশতি ও স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি আর আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখি। মহান আল্লাহর কাছে সকাতর প্রার্থনা করি- হে দয়াময় মালিক! আপনি বিশ্ববাসীকে মহামারি করোনা থেকে রক্ষা করুন। আপনার দয়ার চাদরে বিশ্ববাসীকে আবৃত করে নিন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম