শিক্ষা

বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিউশন ফি আদায়ে ‘বড় চাপ’

বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে টিউশন ফি আদায়ের জন্য বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অনেক জায়গায় ‘কপালে গামছা বেঁধে’ পরবর্তী মাসের বেতন আদায়ের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। অর্থ পরিশোধ না করলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল ও পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত না করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

Advertisement

তবে বর্তমান সময়ে সব প্রতিষ্ঠানকে মানবিক হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যারা অর্থ আদায়ে চাপ সৃষ্টি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ১ জুন থেকে আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সব বেতন পরিশোধের তাগিদ দেয়া হয়েছে। শুধু বিকাশে এ অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। ২৪ জুনের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করা হবে বলে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তায় জানানো হয়েছে।

ওই কলেজের একাধিক অভিভাবক জানান, গত ১ জুন থেকে তিন দফায় স্কুল থেকে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে টিউশন ফি পরিশোধে নির্দেশনা দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফি পরিশোধ করতে না পারলে একাডেমিক ব্যবস্থা হিসেবে শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করে নতুন করে ভর্তি করতে হবে বলে জানানো হয়।

Advertisement

তারা বলেন, ‘গত ১৭ মার্চ থেকে মে পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, জুন থেকে আংশিক অনলাইন কার্যক্রম শুরু হয়। জুনের ১ তারিখ থেকে সব বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে এসএমএস দেয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারলে একাডেমিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুনরায় ভর্তিসহ পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হবে না।’ এ কারণে অনেকেই সন্তানের টিউশন ফি পরিশোধ করছেন।

জানতে চাইলে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শওকত আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক অভিভাবক ছয় মাস ধরে টিউশন ফি আদায় করেননি, এ অর্থ আদায়ে নোটিশ জারি করা হয়েছে। যারা দিতে পারবেন না তাদের ভর্তি বাতিল করে নতুন ভর্তি করতে বলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে রাজউক কোনো অর্থ পায় না, শিক্ষার্থীদের ভর্তি-টিউশন ফি দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ও প্রতিষ্ঠান চালাতে হয়। অভিভাবকরা যদি ফি না দেন তবে প্রতিষ্ঠান চলানো অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে আমরা বারবার নোটিশ দিয়ে অর্থ পরিশোধ করতে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

কেউ যদি এক সঙ্গে ছয় মাসের বেতন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন তবে স্কুলের হিসাব বিভাগে গিয়ে জানানোর কথা উল্লেখ করে অধ্যক্ষ বলেন, ‘সব বকেয়া পরিশোধে আমরা কাউকে চাপ সৃষ্টি করছি না, যাদের আর্থিক সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে, তবে ঢালাওভাবে অর্থ মাফ করা সম্ভব হবে না।’

Advertisement

কাজী শওকত আলম বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও গত ৯ এপ্রিল থেকে অনলাইন মাধ্যমে আমরা শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছি। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মধ্যে মনোযোগী করতে এ মাধ্যমে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নে টেস্ট পরীক্ষা শুরু করা হবে।’

এদিকে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবকদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করতে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। মোবাইলে এ সংক্রান্ত ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। টিউশন ফি পরিশোধ করা না হলে অনলাইন ক্লাস থেকে বহিষ্কার ও পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হবে না বলে শ্রেণি শিক্ষকদের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক শিক্ষার্থী বকেয়া বেতন পরিশোধ করেননি। তিন মাস পর পর টিউশন ফি পরিশোধ করার নিয়ম থাকলেও অনেকে চার থেকে পাঁচ মাসের বেতন পরিশোধ করেননি। এ কারণে বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে নির্দেশনা জারি করা হয়। অন্যদিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বকেয়া চার মাসের বেতন মওকুফ করে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করতে অভিভাবকদের এসএমএস দেয়া হয়েছে। তবে দুই মাসের বেতনের সঙ্গে ডায়েরি, সিলেবাস, বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী পালন, পরীক্ষার খাতাসহ বিভিন্ন ফি বেতনের সঙ্গে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। তবে কিছু অভিভাবকের আপত্তির ফলে তা বাতিল করা হয়।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থীর গত পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে মানবিক বিবেচনায় গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই মাসের বেতন পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। তার সঙ্গে ডায়েরি, সিলেবাস, বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী পালন, পরীক্ষার খাতাসহ অন্যান্য ব্যয় পরিশোধ করতে বলা হলেও তা বাতিল করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ক্লাসের সহস্রাধিক ছাত্রীর বেতন ফ্রি করে দেয়া হয়েছে। অথচ কিছু সুবিধাবাদী মানুষ ভিকারুননিসায় নানাভাবে ঝামেলা করে। প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে তারা অসৎ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে।’

চাপ সৃষ্টি করে টিউশন ফি আদায় না করার আহ্বান জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. গোলাম ফারুক চৌধুরী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের উভয়ে সহনীয় আচরণ করতে হবে। টিউশন ফি দিয়ে প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা হয়। তাই একে অপরের ওপর চাপ দিয়ে কিছু আদায় না করে মানবিক বিবেচনায় কিছু ছাড় দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘চাপ সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের বেতন আদায় না করতে আমরা বারবার আহ্বান জানিয়ে এলেও কিছু প্রতিষ্ঠান অমানবিক আচরণ করছে।’ তাদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশব্যাপী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যদিও করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে নয় সরকার। এ সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সংসদ টেলিভিশনে ক্লাসগুলো সম্প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে।

এমএইচএম/এফআর/পিআর