ফয়সাল কবির বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা। তিনি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার (এইচআর) হিসেবে রিক্রুটমেন্ট বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তার ক্যারিয়ার ও সফলতা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সমসাময়িক বিষয়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বেনজির আবরার—
Advertisement
আপনার ছোটবেলা ও পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই—ফয়সাল কবির: বাবার চাকরির সুবাদে ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় বসবাস। বাবা ঢাকায় আসেন ১৯৮২ সালে। এক ভাই, এক বোনের মধ্যে আমি বড়। মিরপুর-১ এ বাবার অফিসের কোয়ার্টারে পরিবারসহ থাকা। তাই বলা যায়, আমার বেড়ে ওঠা ও দুরন্তপনার হাতেখড়ি সেখানেই। বাসার পাশে এক স্কুলে প্রথম ভর্তি এবং সেখান থেকেই বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস ২০০৪ সালে। আশানুরূপ ফল না আসা এবং ব্যবসা শিক্ষায় পড়ার স্বপ্ন থেকে ঢাকা কমার্স কলেজে ভর্তি হওয়া। সেখান থেকেই ২০০৬ সালে এইচএসএসি পাস করা। জীবনের অনেক স্বপ্ন দেখার শুরু বলতে পারি কমার্স কলেজে ভর্তির পর থেকেই। এরপর এআইইউবি থেকে মার্কেটিংয়ে বিবিএ এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচআরএমের ওপর এমবিএ ডিগ্রি অর্জন।
এ পেশায় যেভাবে এলেন—ফয়সাল কবির: শিক্ষা জীবনের শুরুতে অবশ্য মার্কেটিংয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বিবিএর পর ইন্টার্নশিপ করতে গিয়ে সেই প্রতিষ্ঠানেরই এইচআরএম ডিপার্টমেন্টে কাজ করা শুরু। সেখানে পরিচয় হওয়া বড় এক ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় সত্যিকার অর্থে এইচআরে কাজ করার এক প্রবল ইচ্ছা জন্ম নেয়। তার সাথে এইচআর নিয়ে কথা বলার পরেই নিজেকে আবিষ্কার করি, আমার মধ্যে কী কী স্ট্রেন্থ এবং উইকনেস আছে। বুঝতে পারি, কেন আমার এইচআর ট্র্যাকে কাজ শুরু করা উচিত।
যেভাবে আপনার জীবন বদলে গেল—ফয়সাল কবির: এমবিএ পাস করার পর এক্সাটেক সলিউশন লিমিটেড নামে এক আইটি ফার্মে এইচআর ট্রেইনি হিসাবে যোগদান করি। এক্সাটেক সলিউশন লিমিটেড বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এসএপি (এইচআরএমসি) ইমপ্লিমেন্টের কাজ করতো। সেই সুবাদে অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের এইচআরে কাজ করা লোকজনের সাথে পরিচয় এবং এইচআর ডিপার্টমেন্টে কাজ করার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। সেখান থেকে বসুন্ধরা গ্রুপে যোগদান করি ২০১৫ সালে। আজকে যতটুকু অর্জন করতে পেরেছি, তার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের পেপার সেক্টরের হেড অব এইচআর অ্যান্ড অ্যাডমিন (মো. দেলোয়ার হোসেন) স্যারের ভূমিকা অশেষ। তার কাছে শেখা অনেক কিছুই এখনো আমার চলার পথের পাথেয়। এরপর প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে যোগদান করি ২০১৭ সালে। বর্তমানে এখানে কর্মরত আছি রিক্রুটমেন্ট বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক হিসাবে। এছাড়া প্রাণের রিক্রুটমেন্টের লিড হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি।
Advertisement
কোভিড-১৯ যে বার্তা দিয়ে গেল—ফয়সাল কবির: আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) একটি প্রতিবেদনে বলছে, মহামারীর কারণে এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে বিশ্বে আগামী তিন মাসের মধ্যে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের পূর্ণ বা খণ্ডকালীন মোট কর্মশক্তির প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে চার জনের পেশা কোন না কোনভাবে করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বা হবে। এর প্রভাব যে বাংলাদেশেও ভালোভাবে পড়বে, তা সহজেই অনুমেয়। রফতানি বাজারের খারাপ অবস্থার কারণে বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির ভেতর থাকতে হবে বলেই মনে হয়।
নতুন চাকরিপ্রার্থীদের জন্য যা বলতে চান—ফয়সাল কবির: আমি বলবো, কোভিড-১৯ ফ্রেশারদের জন্য খুব নেতিবাচক বার্তা না দিলেও খুব ইতিবাচক বার্তা দিতেও পারছে না। এইচআর সেক্টরে চাকরি পেতে হলে দ্রুত চিন্তাশক্তি, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকা বাঞ্ছনীয়। তাই এ গুণাবলী যার থাকবে, প্রত্যাশিত চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও তার বেশি থাকবে। এ ক্ষেত্রে যারা এইচআর সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চায়, তারা যদি পছন্দের চাকরি ক্যারিয়ারের শুরুতেই খুঁজে না পান, তাহলে যে কাজের সুযোগ পান সেটা দিয়েই শুরু করুন। সামনের সময়গুলোতে ফ্রেশারদের অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে। এতে কর্মী ছাঁটাইয়ের একটি প্রবণতা তৈরি হতে পারে। আবার কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও বেতন থেকে শুরু করে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যে কমে আসবে, তা বলাই বাহুল্য। আর এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের রিক্রুটমেন্ট প্রফেশনালরা সঠিক কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিযোগীর বিজনেস কমিউনিকেশন, পিপলস স্কিলস এবং ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সের উপর জোর দেবে। একজন চাকরিপ্রার্থীর ডাইভার্সিফাইড কাজের পারদর্শিতার গুরুত্ব কোম্পানির কাছে আরও বাড়বে। যেহেতু এ সময়গুলোতে সামাজিক দূরত্ব মেনে অনেক কাজ করতে হচ্ছে এবং সামনের সময়গুলোতেও করতে হতে পারে, তাতে চাকরিপ্রার্থীর টেকনোসেভি তাকে কম্পিটিটিভ অ্যাডভান্টেজ এনে দেবে।
আপনি যে সংগঠনের সাথে আছেন—ফয়সাল কবির: প্রফেশনাল লাইফে বাংলাদেশ এফএমসিজি এইচআর সোসাইটির সাথে জড়িত আছি বর্তমানে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে আত্মীয় এবং বন্ধুদের নিয়ে কিছু সামাজিক উন্নয়নমূলক সংগঠনের সাথে জড়িত আছি।
রিক্রুটমেন্ট লিড হিসেবে যে স্কিলগুলো খুঁজে থাকেন— ফয়সাল কবির: তরুণদের আমি বলবো, কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। পড়ালেখার মাঝে সেমিস্টার বা বছর শেষের বিরতিতে অর্থ উপার্জনের চাপ না থাকায় এ সময়টা আপনার ভবিষ্যতের কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য একটি দুর্দান্ত সময়। এ পর্যায়ে এসে আপনি যেকোন প্রতিষ্ঠানে স্বল্প সময়ের জন্য খণ্ডকালীন চাকরি করতে পারেন। কারণ তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন, আপনি কী কাজ করতে পছন্দ করেন, কোথায় আপনার স্ট্রেন্থ, কোথায় দুর্বলতা এবং আরও কোন কোন বিষয়ে আপনার পড়ালেখা করা উচিত। তাই অবসর সময় কাটানোর সেরা একটি উপায় হতে পারে ভবিষ্যতের কাজের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করা।
Advertisement
এসইউ/এমএস