করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে গত ৯ জুন মধ্যরাত থেকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় পরীক্ষামূলক লকডাউন করা হয়। এ এলাকায় করোনা পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে না আসায় লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে বলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা গেছে।
Advertisement
প্রাথমিকভাবে পূর্ব রাজাবাজার ১৪ দিনের জন্য লকডাউন করা হয়। তখন বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে লকডাউন বাড়িয়ে ২১ দিন করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় লকডাউন বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লকডাউনের আগে এ এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন ৩৯ জন। লকডাউনের পরও আরও অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। সোমবার (২২ জুন) লকডাউনের ১৪ দিন শেষ হচ্ছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিণে না আসায় ডিএনসিসির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে লকডাউন বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন এলাকার স্বেচ্ছাসেবীরা জানিয়েছেন, এ এলাকায় কাউকে ঢুকতে এবং এখান থেকে কাউকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু এলাকার ভেতর অনেকেই অসচেতনভাবে ঘোরাঘুরি করছেন। যে কারণে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে থাকতে পারে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি বাসিন্দাদের ঘরে রাখতে। কিন্তু তারপরও যদি কেউ বাইরে বের হয়ে অলিগলিতে ঘুরে বেড়ায়, সেটা সত্যিই দুঃখজনক। আশা করছি আগামী কিছুদিনের মধ্যেই এই এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
Advertisement
এদিকে লকডাউন চলাকালে পূর্ব রাজাবাজার এলাকা অনেকটাই নীরব। নেই মানুষের কোলাহল, নেই যানজট, নেই ছুটে চলা মানুষের ভিড়। পূর্ব রাজাবাজারের আটটি প্রবেশপথের মধ্যে শুধু আইবিএ হোস্টেলের পাশেরটি খোলা রয়েছে। কিন্তু সেই গেট দিয়েও সাধারণ মানুষকে ঢুকতে বা বের হতে দেয়া হচ্ছে না। এই এলাকায় প্রায় ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন কাউন্সিলরের নির্দেশে।
এদিকে গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা রেড জোন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আমাদের কাছে এখনও সুনির্দিষ্ট ম্যাপিং, তালিকা আসেনি। শুধু জোন ভাগ করে একটা খসড়া পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আমরা এখন সুনির্দিষ্ট কোনো ম্যাপিং পাইনি। আমরা তাদের বারবার বলছি, আপনারা সুনির্দিষ্ট ম্যাপিং দেন আমরা লকডাউন বাস্তবায়ন করব।
আতিকুল ইসলাম বলেন, লকডাউন কার্যকর করার আগে প্রথমে কিন্তু রাজাবাজারকে রেড জোন চিহ্নিত করা হলো। পরে আমরা সার্ভে করে দেখলাম সেটা রাজাবাজার না, শুধু পূর্ব রাজাবাজার। তাই আমরা চাই সুনির্দিষ্ট ম্যাপিং। সেক্ষেত্রে যদি বাড়ি চিহ্নিত করে দেয়া যায় তাহলে আরও ভালো। আমরা বাড়িটি সম্পূর্ণরূপে লকডাউন করতে পারব।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, লকডাউনের প্রস্তুতি বিষয়ে আমি কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের প্রত্যেককে প্রস্তুত থাকতে বলেছি। সুনির্দিষ্ট ম্যাপিং পেলে আমরা কাজ শুরু করতে পারব। ম্যাপিংটা কিন্তু করে দেবে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে এখন পর্যন্ত আমরা ডিটেল ম্যাপিং পাইনি। আমরা এখন শুনতে পেয়েছি যে যারা প্রথমদিকে টেস্ট করিয়েছে তারা তার পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দেয়নি। সেখানে হয়তো উল্লেখ করে মিরপুর বা উত্তরা। সেই সঙ্গে ফোন নম্বর এন্ট্রি করেছে। তাই এটা একটা সমস্যা লকডাউনের ক্ষেত্রে। কারণ নির্দিষ্ট কোন জায়গা, কোন স্থান, সেটা চিহ্নিত করা কঠিন।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, আমরা পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় লকডাউন করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। সেখানকার মানুষের বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম আবদার। অনেকে যেমন পিৎজা চাচ্ছে তেমনি অনেকে প্রয়োজনীয় ওষুধও চাচ্ছে। আমাদের নগরবাসীর জন্য জীবন-জীবিকা দুটোই দেখতে হবে। তাই বলব যদি সুনির্দিষ্ট চিহ্নিত করে দেয়া হয় তাহলে আমরা ওই বাড়িটি লকডাউন করে দিতে পারতাম। আমাদের বিশেষজ্ঞ কমিটি, টেকিনিক্যাল কমিটি যেভাবে বলবে সেভাবেই কাজ করব। তারা যত তাড়াতাড়ি সুনির্দিষ্ট তালিকা দেবে আমরা তত তাড়াতাড়ি কাজ করতে পারব।
এর আগে করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি ঢাকায় ৪৫টি এলাকাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে তা লকডাউনের সুপারিশ করে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৮টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭টি এলাকা রয়েছে। রয়েছে চট্টগ্রামের দশটি এলাকা।
জানা গেছে, লকডাউনের জন্য রেড জোন হিসেবে তালিকায় থাকা ঢাকা উত্তর সিটির এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে- গুলশান, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রাজাবাজার, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গুলশান, উত্তরা, মিরপুর।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে রেড জোনের জন্য সুপারিশকৃত এলাকার মধ্যে আছে- যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, পরীবাগ, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড ও সেগুনবাগিচা।
এএস/বিএ/জেআইএম