দেশজুড়ে

এএসআই হত্যা : থামছে না কান্নার রোল

ঢাকা থেকে মা খায়রুন্নেসার কোলে এক প্রকার ঘুমিয়ে বাবার কফিনের যাত্রী হতে হয়েছে ২০ মাসের শিশু মো. পরাগের। পাশেই ৬ বছরের বড় বোন জান্নাতুল ফৌরদৌসীর দু`চোখ বুজে এসেছে ক্লান্তি। শুক্রবার রাত পৌনে ৯ টায় ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে পুলিশ প্রটোকলে ইব্রাহিম মোল্লার মরদেহ পৌঁছালে শত শত মানুষের আহাজারির শব্দে ঘুম ভাঙে শিশু পরাগের।  ঢাকা থেকে বাগেরহাটের সাড়ে ৩শ কিলোমিটারের এই পথ ইব্রাহিমের সহধর্মীনী খায়রুন্নেসার কাছে মনে হয়েছে হাজার কিলোমিটারের। স্বামীর অবর্তমানে অবুঝ দুই শিশুর ভবিষতের চিন্তায় দু`চোখের পাতা এক করতে পারেনি খায়রুন্নেসা। অপলক দৃষ্টিতে শুধু সন্তানের কচি মুখের দিকে তাকিয়ে নির্ঘুম রাত কেটেছে তার। কোনো কিছু বলার ভাষা তার নেই। শনিবার সকালে বাগেরহাটের কচুয়ার পালপাড়ার মোল্লা বাড়ির কান্নার রোল দূর থেকে শোনা গেছে। আদরের ধন ইব্রাহিমকে হারিয়ে বৃদ্ধ আছিয়া বেগমের চিৎকার কেউ থামাতে পারছেন না। বাবা আব্দুস সাত্তার মোল্লা নির্বাক হয়ে বসে আছেন কুড়ে ঘরের বারান্দায়। নির্বাক হয়ে শুধু ফেলে চলছে চোখের জল। অবুঝ শিশু মোহাম্মদ পরাগ ও ফেরদৌসীকে নিয়ে প্রতিবেশীরা বাড়ির উঠানে ঘুরছেন। শুক্রবার রাত ১০টায় তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সোলারকোলার পালপাড়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে পরিবারিক করবস্থানে দাফন করা সাহসী এই পুলিশ অফিসারকে। জানাজায় কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মাহফুজুর রহমানসহ কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ অংশ নেয়।এর আগে এএসআই ইব্রাহিমের মরদেহ রাত পৌনে ৯টার দিকে পুলিশ ভ্যানে করে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। নিহত ইব্রাহিম মোল্লার মরদেহ এক নজর দেখতে ছুটে আসেন এলাকার হাজার-হাজার নর-নারী। তখন ইব্রাহিমের স্বজনদের কান্না ও আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে এলাকার বাতাস। কেউই সান্ত্বনা দিতে পারছে না সন্তানহারা বৃদ্ধ বাবা-মাকে। অনেক মানুষের ভিড়ে নিহত এএসআইয়ের অবুঝ দুই শিশু জান্নাতুল ফেরদৌস (৬) ও  মোহাম্মদ পরাগ  (বিশ মাস) অপলোক দৃষ্টি কেবলি খুঁজে ফিরছিলো তাদের প্রিয় বাবাকে।সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. ইব্রাহিম মোল্লার বাড়িতে এখন ছুটছেন সাধারণ মানুষ। সাহসী এই পুলিশ অফিসারের পরিবারের প্রতি সাধারণ মানুষের তৈরি হয়েছে শ্রদ্ধা। ইব্রাহিমের অবুঝ দুই শিশু সন্তানদের দেখে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন। বৃদ্ধ বাবা-মা, বিধবা বোন, স্ত্রী-সন্তানসহ ৮ সদস্যের পরিবারের এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এই পরিবারটি। শনিবার সকালে নিহত এএসআই ইব্রাহিমের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে তার বাড়িতে যান অ্যাডভোকেট মীর শওকত আলী বাদশা এমপি। পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় এমপিকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের বর্তমান অবস্থা দ্রুত প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা ও দেশের জন্য জীবন দেয়া এএসআই ইব্রাহিমের অসহায় এই পরিবারটির পাশে সরকার দাঁড়াতে বলে এমপি বাদশা পরিবারটিকে আশ্বাস দেন।শওকত আলী বাবু/এসএস/পিআর

Advertisement