রাজনীতি

করোনা নিয়ে বিশ্ব নেতাদের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়লেন রিজভী

করোনাভাইরাস ইস্যুতে বিশ্ব নেতাদের মধ্যে যে বিতর্ক চলছে তাতে তাদের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। একই সাথে তার মন্তব্য, কোনো ভদ্রলোক ক্ষমতাসীন দলের সাথে নেই। অধিকাংশ এমপির ছেলে গুন্ডামির মধ্যে চলে যাচ্ছে।

Advertisement

রোববার (২১ জুন) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশন আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, বৈশ্বিকভাবে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে বিশ্ব নেতৃবৃন্দেরও অনেকটা মান কমে এসেছে। এই ভাইরাস প্রকৃতিজাত নাকি ল্যাবরেটরিজাত- এই বিতর্ক করছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। যদিও এখন এটা কিছুটা কমে আসছে কিন্তু প্রথম দিকে আমরা দেখলাম উন্নত গণতন্ত্রের বিশ্ব যাদের কাছে প্রযুক্তির চাবিকাঠি মনে হলো তারা এগুলোকে নিয়ে এক ধরনের ফাজলামি করছে।

তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি এই সিদ্ধান্তহীনতার কারণে অনেক উন্নত দেশ এমনভাবে মৃত্যুর কাফেলা সৃষ্টি হলো শেষে বাধ্য হয়ে ইতালির প্রধানমন্ত্রী বললেন- আমাদের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। বিজ্ঞান প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা হয়েছে। কারণ ওটা তো উন্নত দেশ, বাংলাদেশ তো না। চেষ্টা করেছেন কিন্তু তারপরও সেখানে মানুষের মৃত্যুর মিছিল থামাতে পারেননি।

Advertisement

এদিকে আজ সাতক্ষীরায় বিএনপির ত্রাণ কার্যক্রম স্থানীয় এমপির নির্দেশে হামলা হয়েছে- এমন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীনদের মধ্যে এক ধরনের সাইকোলজিক্যাল বাকশাল কাজ করছে।

তিনি বলেন, কোনো ভদ্রলোক এখন ক্ষমতাসীন দলের সাথে নেই। থাকলে একজন এমপি তো চেষ্টা করবে তার ছেলে কমপক্ষে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে কিংবা ইউনিভার্সিটির মাস্টার্স ডিগ্রি পাবে, বিদেশে পাঠাবে। অধিকাংশই দেখছি এমপির ছেলে গুন্ডামির মধ্যে চলে যাচ্ছে এবং প্রত্যক্ষভাবে প্রশাসন এদের সাপোর্ট দিচ্ছে।

করোনাকালীন বিএনপির কার্যক্রম নিয়ে রিজভী বলেন, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে বিএনপি, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে কিন্তু আওয়ামী লীগ এটা করেনি। বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে রিকশাস্ট্যান্ডে আমরা যখন লিফলেট বিতরণ শুরু করলাম এটা যখন পিকে গেছে তখন শুনলাম আওয়ামী লীগ শুরু করেছে। আমরা বেশি করেছি আওয়ামী লীগ কম করেছে এটা মুখরোচক কথা না এটা সত্য। এটা সংবাদপত্রেও এসেছে।

তিনি বলেন, লকডাউন সারাদেশে শুরু হয়েছে, এর কারণে প্রায় সারাদেশে দুর্ভিক্ষ অবস্থা। এ সময় দরকার ছিল অসহায় মানুষদের খাদ্য সহায়তা এবং আর্থিক সহায়তা করা। এটার প্রোগ্রাম যখন এলো বিএনপির পক্ষ থেকে এটা একেবারে ঝড়ের মতো কাজ করেছে। ঢাকা থেকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ত্রাণ তৎপরতা চলছে। ঢাকা শহর, ঢাকার বাইরে ও কয়েকটি এলাকায় আমি সংশ্লিষ্ট ছিলাম আমি ত্রাণ দিতে দেখেছি।

Advertisement

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, বিএনপি'র এই ড্রাইভট যে কত কার্যকর ছিল সেটা আমি দেখেছি। এই ত্রাণ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে আমরা একটা প্রতিক্রিয়া দেখতে পেলাম সরকারের মধ্যে। যখন এটা নিয়ে বেশ সুনাম হচ্ছে, খবরের কাগজগুলো লিখছে তখন চট করে রাজশাহীর তানোরের ছাত্রদলের একটা ছেলেকে গ্রেফতার করে ফেলা হলো। এরপর আরেকজনকে দেখেছি কোথায় যেন তাকে গুম করে ফেলেছে। এই যে মামলা গ্রেফতার এবং গুম এগুলো দেখে মনে হচ্ছে সরকার বিব্রত হয়েছে বিএনপির কাজ দেখে। এখন ভয় দেখানোর পালা। ভয় দেখানো কাজটা শুরু করলো যেটা গত ১২ বছর ধরে করে আসছে। এই ভয় দেখিয়ে কার্যক্রম থেকে নেতাকর্মীদের দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা।

রিজভী অভিযোগ করেন, সরকার মানুষের ক্ষুধা-দারিদ্র্যকে নিয়ে উপহাস করছে। এই উপহাস করতে গিয়ে বাংলাদেশ আজ ভয়ঙ্কর এক অব্যবস্থাপনার মধ্যে পড়েছে। তা না হলে এই সময়ে বাংলাদেশে এত মানুষ মারা যাবে কেন? ভিয়েতনাম আগেভাগেই চেষ্টা করেছে, ভুটানে একটি লোক মারা যায়নি।

তিনি বলেন, আমাদের মনে হয় করোনার আঘাত আরও আগেই এসেছে কিন্তু সরকার একটি বিশেষ উৎসব পালনের জন্য তারা এটাকে আড়াল করে রেখেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে মানদণ্ড সে অনুযায়ী বাংলাদেশ কাজ করেনি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় করোনা পর্যবেক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপনের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ভাইস চেয়ারম্যান ড. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন-আল-রশিদ, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ফরহাদ হালিম ডোনার বক্তব্য রাখেন।

কেএইচ/বিএ/এমকেএইচ