একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় (এনজিও) চাকরি করেন নবরতন চাকমা। সেখান থেকে ছুটি না পাওয়ায় আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বাঁচাতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর অসুস্থতার কথা জানালেও মন গলেনি এরিয়া ম্যানেজারের। অসুস্থ অবস্থায় মারা গেছেন নবরতন চাকমার স্ত্রী বিপাশী চাকমা। খাগড়াছড়ির রামগড়ে এ ঘটনা ঘটে।
Advertisement
এ ঘটনায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’ মানিকছড়ির এরিয়া ম্যানেজার ইকবাল বিন তৈয়বকে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন সংস্থাটির মাঠকর্মী নবরতন চাকমা। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডের জন্য এরিয়া ম্যানেজারকে দুষছেন সবাই। করোনাকালেও এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকেই।
নবরতন চাকমা তার ফেসবুকে লিখেছেন,‘আমার ভালোবাসা আমাকে ছেড়ে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়ে গেল, শুধু একজন পাষাণ এরিয়া ম্যানজারের জন্য। দুদিন আগে ছুটি চেয়েছিলাম। বলেছিলাম স্যার, আমার স্ত্রী অসুস্থ, আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা, বেশি বমি করে, বাসায় দেখাশোনা করার মতো মানুষ নেই, আমাকে ছাড়া একা থাকতে পারবে না। কিন্তু আমার কথা তোয়াক্কা করে নাই। তারপর আমার ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের মাধ্যমে সুপারিশ নেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকেও গালাগাল দিয়ে সুপারিশ বাতিল করে। দুদিন বমি করতে করতে দুর্বল হলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। আমার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এরিয়া ম্যানেজারকে ফোনে বলে স্যার উনার স্ত্রী মরা মরা অবস্থা, ছুটি দিয়ে দেন। এরিয়া ম্যানেজার আমার ম্যানেজারকে গালি দিয়ে বলে মানুষ কি এতো সহজে মরে নাকি?? তারপর এরিয়া ম্যানেজার আমাকে ছুটি দেয়, হসপিটালের কাছে এসে আমার সহকর্মীদের বলি আমার স্ত্রীর কি হয়েছে..?? আমার সঙ্গে কেউ কথা বলছে না। হসপিটালের সিটে গিয়ে দেখি আমার ভালোবাসা আমার সাথে কথা না বলে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে।’
জানা গেছে, আট মাস আগে পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন সংস্থার রামগড়ে মাঠকর্মী হিসেবে যোগ দেন নবরতন চাকমা। মাত্র দুদিন আগে আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিপাশী চাকমাকে রামগড়ের ভাড়া বাসায় রেখে মানিকছড়িতে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেন নবরতন চাকমা।
Advertisement
নবরতন চাকমা বলেন, মানিকছড়িতে যোগদানের একদিন পর স্ত্রী আমাকে ফোন করে তার অসুস্থতার কথা জানায়। বিষয়টি জানার পর স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য আমি একাধিকবার ম্যানেজারের কাছে ছুটি চাই। স্ত্রী অসুস্থ জেনেও তিনি আমাকে ছুটি দেননি। ছুটি না পাওয়ায় আমি বাড়ি যেতে পারিনি।
তিনি বলেন, বুধবার আমার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়। এ সময় আমার সহকর্মীরা আমাকে দ্রুত রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালে আসতে বলেন। কিন্তু তখনও আমি জানতাম না আমার স্ত্রী মারা গেছে। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম আমার স্ত্রী মারা গেছে। তার সঙ্গে শেষ দেখাটাও হয়নি। কোনো কথা বলার সুযোগও পাইনি আমি।
নিজের স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য এরিয়া ম্যানেজারকে দায়ী করে নবরতন চাকমা বলেন, আমার স্ত্রীর অসুস্থতার কথা রামগড়ের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এরিয়া ম্যানেজারকে ফোনে জানালে তিনি ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে ‘গালিগালাজ’ করেন। উনার অমানবিক আচরণেই আমার স্ত্রী মারা গেছে। আমার স্ত্রী অসুস্থ ছিল, তা এরিয়া ম্যানেজারকে বলার পরও তিনি ছুটি দেননি। আমি আমার স্ত্রীর পাশে থাকলে কখনও সে মারা যেত না। স্ত্রী বিপাসা চাকমার মৃত্যুর জন্য এরিয়া ম্যানেজারকে দায়ী করে তার শাস্তি দাবি করেন নবরতন চাকমা।
এদিকে নবরতন চাকমা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় ক্ষুব্ধ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের মানিকছড়ির এরিয়া ম্যানেজার ইকবাল বিন তৈয়ব। তিনি বলেন, পদক্ষেপের একজন কর্মী হয়ে নবরতন এভাবে ফেসবুকে লিখতে পারেন না। তিনি আমার কাছে সেভাবে ছুটি চাননি। তার স্ত্রী স্ট্রোক করে মারা গেছেন। নবরতন চাকমা সেখানে থাকলেও তার স্ত্রী মারা যেত।
Advertisement
মুজিবুর রহমান ভুইয়া/আরএআর/পিআর