রাজনীতি

পদ ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে থমকে গেছে বিএনপির পুনর্গঠন

নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে আরো ২৩ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো অগ্রগতি নেই বিএনপির পুনর্গঠনে। চলতি বছরের মধ্যেও পুনর্গঠন পক্রিয়া শেষ করা সম্ভব হবে কি-না তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। পদ ভাগাভাগির দ্বন্দ্বেই বিএনপিকে এ রকম অবস্থার মুখে পড়তে হয়েছে বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজপথের আন্দালনে সফলতা পেতে দল পুনর্গঠনের প্রতি কড়া নজর দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ লক্ষ্যে দ্রুত সারাদেশে কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করতে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তার নিদের্শনা অনুযায়ী কেন্দ্র থেকে গত ৯ আগস্ট সারাদেশের ৭৫টি ইউনিটে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাসময়ে কোনো ইউনিটই কেন্দ্রে কমিটি জমা দিতে পারেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয় সারাদেশে। তবে যার স্বাক্ষরিত চিঠি সারাদেশে পাঠানো হয়েছে সেই শাহজাহানের এলাকা নোয়াখালীতেই যথাসময়ে কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কমিটি গঠন করার প্রাথমিক প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। এই এলাকার একাধিক নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ে থাকায় নানা দ্বন্দ্বের কারণে কমিটি পুনর্গঠন তো দূরের কথা বিষয়টি নিয়ে এখনো সেই অর্থে কোন আলাপ আলোচনাই হয়নি।এদিকে, কক্সবাজার জেলায় অাটটি উপজেলা ও চারটি পৌরসভার কোনোটিতেই কমিটি গঠন করতে পারেনি স্থানীয় বিএনপি নেতারা। কমিটি নিজেদের বাগে আনতে নানা ফন্দি ফিকিরের কারণে এর গঠন প্রক্রিয়ার কিছুই কক্সবাজারে হয়নি বলে জানা গেছে। এছাড়া চাঁদপুরসহ দেশের বেশ কয়েকটি ইউনিটে কমিটি গঠন করা হলেও আরেকটি পক্ষ পাল্টা কমিটি গঠন করেছে। চাঁদপুরে বেশ কয়েকটি ইউনিটে কমিটি-পাল্টা কমিটি গঠনের খবর পাওয়া গেছে। যশোরে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া চলমান দাবি করা হলেও দৃশ্যমান এরকম কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুল হুদা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু দুজনেই বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তবে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেটসহ হাতে গোনা কয়েকটি ইউনিটে কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে। তবে এসব কমিটিতেও সংশ্লিষ্ট এলাকার কেন্দ্রীয় নেতা, স্থানীয় নেতা, ও পদ প্রত্যাশীদের নানা দাবির কারণে অসন্তোষ বিরাজ করছে।এদিকে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সরকার। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে বিএনপির পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে কমিটি গঠন শেষ করতে না পারলে নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গউছুর আজম ডলার জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে যারা হামলা-মামলার কারণে জেলার বাইরে ছিল তাদের বাদ দিয়েই একটি পক্ষ কমিটি গঠনের কথা বলছে। আবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি দিতে কেন্দ্র থেকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে একপক্ষ ত্যাগি নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কাউন্সিল করার পক্ষে, অপরপক্ষ তাদের নিয়েই কমিটি গঠনে মতামত দিয়েছে।’তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের মতপার্থক্য দল পুনর্গঠনের কাজে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তিনি সুনির্দিষ্ট করে কোনো কেন্দ্রীয় নেতার নাম উল্লেখ করতে অনীহা প্রকাশ করেন। ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. তৈমুর রহমান জানান, দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। অল্প সময়ে কমিটি গঠন সম্ভব নয়। আমরা দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, নানা কারণে দলের পুনর্গঠন যথাসময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে দলটির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন নয়াপল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের পুনর্গঠনে সরকার বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শাহজাহান বলেন, কয়েকটি জেলা ইতোমধ্যে তাদের কমিটি কেন্দ্রের কাছে জমা দিয়েছে। আবার বেশ কয়েকটি জেলা সময় চেয়েছে। তাদেরকে সময় দেয়া হয়েছে। তবে যেসব ইউনিট যথাসময়ে কমিটি গঠন না করে কেন্দ্রকে অবহিত করেনি তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে চলতি বছরের মধ্যে দলের পুনর্গঠন সম্ভব কি-না -এরকম প্রশ্নের জবাবে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বিএনপির এ যুগ্ম মহাসচিব। এমএম/এসআইএস/আরএস/আরআইপি

Advertisement