ভ্রমণ

ঘরবন্দি হওয়ার আগে ঘুরে এলাম সেন্টমার্টিন

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। তাই বলা যায়, দেশে করোনা হানা দিয়েছে অলরেডি। তবে আমাদের প্লান ছিল দেড় মাস আগেই। আর যা কিছু হোক, আল্লাহর নামে আমরা মার্চের ১৬ তারিখ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেবোই। যেই কথা, সেই কাজ। ১৬ তারিখ বিকেলের মধ্যে যে যার অফিস শেষ করে ৮টার বাসে রওনা দিলাম টেকনাফের উদ্দেশে।

Advertisement

পরদিন ১৭ মার্চ সকাল সাড়ে ৬টায় টেকনাফ পৌঁছলাম। নেমেই লঞ্চের টিকিট কেটে নিলাম। এরপর নাস্তা করে আশেপাশে একটু ঘুরে সকাল ৯টায় লঞ্চে উঠলাম। লঞ্চ সাড়ে ৯টায় ছাড়ল। যাত্রাপথে মানুষ-প্রকৃতি-সমুদ্রের পানির খেলা দেখতে দেখতে, দুষ্টুমি করতে করতে কোনো সমস্যা ছাড়াই আনুমানিক সাড়ে ১১টায় পৌঁছে গেলাম। সেন্টমার্টিন বীচের পাশেই রিসোর্ট ‘নোনা জল’ আমরা ঢাকা থেকেই বুক করে নিয়েছিলাম। তাই থাকা নিয়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি।

সেন্টমার্টিনে পৌঁছে আমরা প্রথমে লাঞ্চ করে রিসোর্টে গেলাম। সেখানে গিয়ে ঘণ্টা দুয়েক বিশ্রাম নিয়ে চলে গেলাম গোসল করতে। নীল পানিতে কিছুক্ষণ ঝাপাঝাপি করে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে আবার সন্ধ্যায় বের হয়ে গেলাম।

বীচের আশেপাশে ঘোরাঘুরি শেষে বাজারে গেলাম। বীচের আশপাশ চোখ জুড়ানোর মত সুন্দর। সেখানে সময় কাটনোর পর লঞ্চ যেখানে আমাদের নামিয়ে দিয়েছে, সেই ব্রিজে গেলাম। ঠান্ডা বাতাসের এক অন্যরকম স্বস্তি। মনে হচ্ছে সারাটা জীবন সেখানেই থেকে যাই। অন্ধকার রাতে পানির ঢেউয়ের শব্দ আর বিশুদ্ধ বাতাস, মন ভালো হতে বাধ্য। সেখানে অনেকক্ষণ সময় কাটানোর পর রাতের খাবার খেয়ে রুমে চলে এলাম। ফিরেই আড্ডা মেরে রাত ১২টা নাগাদ আবারও চলে গেলাম সমুদ্রের গর্জন শুনতে। সে এক অন্যরকম শান্তি, থাকলাম রাত আড়াইটা পর্যন্ত। এরপর রুমে এসে ঘুম।

Advertisement

পরদিন ১৮ মার্চ সকালে নাস্তা করে সাইকেল নিয়ে বীচের একদিক ঘুরে এলাম। সাদা প্রকৃতি আর নীল পানি, সেটাকে চিকচিক করাতে সূর্যের আলো অদ্ভুত এক কম্বিনেশন, দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। ঘণ্টা দুয়েক সাইকেল চালিয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করার পর নেমে পড়লাম পানিতে। অনেকক্ষণ গোসল করে দুপুরের খাবার খেয়ে রুমে চলে এলাম।

বিকেলে আবার বের হলাম। চারিদিক ঘুরলাম আর দেখালাম বিকেলের সুন্দর কিছু দৃশ্য। এরপর রাতে বাজারে ফিরে কিছু কেনাকাটা ও রাতের খাবার খেয়ে চলে এলাম রুমে। আগের দিনের মতই গভীর রাত পর্যন্ত থাকলাম বীচে।

পরদিন ১৯ মার্চ সকালে নাস্তা করে দুটি বাইক নিয়ে চলে গেলাম ছেড়া দ্বীপ। অনেক সুন্দর একটি জায়গা। সেখানে কিছুক্ষণ থেকে ফিরে এলাম। এরপর আবারও সেন্টমার্টিনের শেষ গোসল করে রিসোর্টে চেক আউট করে বেরিয়ে পড়লাম। সেন্টমার্টিনের ৪ বেলা (সকাল-দুপুর-বিকেল-রাত) অন্যরকম সুন্দর। যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। চার বেলায় চার রকম অনুভূতি পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি মুহূর্তই মন ছুঁয়ে যায়।

দুপুরে লাঞ্চ করে উঠে পড়লাম লঞ্চে। এ কয়েকদিন আমরা শুধু মাছ খেয়েছি। যত রকমের মাছ সেখানে আছে; সব ট্রাই করেছি। লঞ্চ ছাড়ল বিকেল ৩টায়, ৬টায় পৌঁছল টেকনাফ। ৮টায় রাতের বাস। ২০ মার্চ সকাল ৬টায় আমরা ঢাকায়। তারপর থেকেই করোনার থাবায় ঘরবন্দি আছি এখনো।

Advertisement

এসইউ/এএ/জেআইএম