দেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। বর্তমানে সংক্রমণের সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকার মধ্যে অন্যতম একটি হলো চট্টগ্রাম। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৮৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়াল।
Advertisement
তবে গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরুর পর প্রথম ৪০ দিনে মোট শনাক্ত হয়েছিলেন মাত্র ১০৫ জন। কিন্তু পরের দেড় মাসে বন্দর নগরে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে দ্রুতগতিতে। গত ৪৬ দিনে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৯৯৩ জন।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত ১৮৭ রোগীসহ সংক্রমণের শিকার হওয়া রোগীর সংখ্যা পৌঁছালো ৬ হাজার ৯৮ জনে।
শনিবার (২০ জুন) সকালে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের চারটি ল্যাব এবং কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৭৭৩টি নমুনা পরীক্ষায় চট্টগ্রামে নতুন করে আরও ১৮৭ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৯২ জন চট্টগ্রাম নগরের এবং ৯৫ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।’
Advertisement
এর মধ্যে বিআইটিআইডিতে ২৬৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪২ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৯ জন, সিভাসুতে ১৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩৯ জন, চমেকের ল্যাবে ২১৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫৪ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে।
এছাড়া কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে চট্টগ্রামের ৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। তবে এইদিন ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলের তথ্য পাওয়া যায়নি।
সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে ফিলিপাইনের এক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের পর চট্টগ্রামে এ প্রথম কোনো বিদেশি নাগরিক করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেন।
শুক্রবার (১৯ জুন) রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
Advertisement
গত ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়ায় ৬৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তির শরীরে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। ওই ব্যক্তি তার ওমরাফেরত মেয়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হন বলে ধারণা করা হয়। পরে ৫ এপ্রিল দ্বিতীয় করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত হন ওই ব্যক্তির ২৫ বছর বয়সী ছেলে। এর পরে এক-দুই করে নগরে করোনার পরিস্থিতি অবনতি হতে শুরু করে। তবে গত ২৬ এপ্রিল থেকে পোশাক কারখানাগুলো চালুর সঙ্গে সঙ্গে নগরের অঘোষিত লকডাউন পরিস্থিতি ভেঙে পড়তে শুরু করে। এরপর কল্পনাতীতভাবে দ্রুত গতিতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৯৮ জন। এর মধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম শহরেই সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা মোট রোগীর প্রায় ৭০ শতাংশ।
প্রথমদিকে নগরের প্রবেশমুখ সিটি গেট, আকবরশাহ ও পাহাড়তলী এলাকাকে ঘিরে করোনার বিস্তার ঘটলেও দ্বিতীয় মাসে সংক্রমিত হয়েছেন নগরের প্রায় সব এলাকার মানুষ। ইপিজেড-বন্দর বা চকবাজারের মতো জনবহুল এলাকায় যেমন করোনার বিস্তার ঘটেছে, তেমনই অপেক্ষাকৃত কম জনবহুল চাঁন্দগাও বা মোহরার মতো এলাকাও বাদ যায়নি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘আন্তঃজেলা ও নগরের অভ্যন্তরে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল থাকায় চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ অতিদ্রুত ছড়িয়েছে। বিশেষ করে মহাসড়ক দিয়ে পণ্যবাহী গাড়িতে যাত্রী পরিবহন হচ্ছে। মাইক্রোবাস ও গাড়ি চলছে। এতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও সাধারণ লোকজন চট্টগ্রামে নিয়মিত আসা-যাওয়া করছেন। এ কারণে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পর বিপজ্জনক হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম।’
আবু আজাদ/এফআর/পিআর