দেশজুড়ে

করোনাকালে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন ডা. ইমদাদুল হক

করোনা পরিস্থিতিতে নওগাঁয় প্রত্যন্ত এলাকার অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত ও দুস্থদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মো. ইমদাদুল হক। তিনি গত তিন মাস ধরে নিজ বাড়িতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এতে উপকৃত হচ্ছেন শত শত শিশু, বৃদ্ধা ও প্রসূতিসহ সব বয়সী রোগী।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শেরপুর মহল্লার বাসিন্দা ডা. মো. ইমদাদুল হক। আর্মি মেডিকেল কোরের সার্জারি বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা তিনি। ২০ বছর আগে তিনি অবসর নিয়েছেন। দেশে করোনাভাইরাস শুরুর পর থেকে প্রত্যন্ত এলাকার অসহায়, দুস্থ ও প্রসূতিরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অপরদিকে বেসরকারি ক্লিনিক ও প্রাইভেট চেম্বারেও বসছেন না ডাক্তাররা। এতে করে সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা পেতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে রোগীদের।

সেই ঠিক মুহূর্তে অসহায়দের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ দিচ্ছেন ডা. মো. ইমদাদুল হক। গত তিনমাস যাবৎ প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর পর্যন্ত নিজ বাসভবনে রোগী দেখছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও নিরাপত্তার সঙ্গে ‘৩১৩ জন স্বেচ্ছাসেবক’ নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ দিয়েছেন। বলতে গেলে তিনি এখন দরিদ্রদের ভরসাস্থল।

এছাড়া স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে দরিদ্রদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে রাতের আঁধারে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের প্রতিটি গ্রামে ও মহল্লায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বিভিন্ন মোড়, রাস্তাঘাট ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে জীবানুনাশক স্প্রে এবং বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে।

Advertisement

শেরপুর পূর্বপাড়া মহল্লার বৃদ্ধা রমিছা বেওয়া ও গৃহবধূ রাবেয়া বলেন, তাদের বাড়ি থেকে সদর হাসপাতালে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে। সেখানে আসা-যাওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার ও খরচও বেশি। এছাড়াও করোনার সময় হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ডাক্তাররা চিকিৎসা দিতে অনেকটা ভয় করছেন। বাড়ির কাছে গত তিন মাস থেকে ফ্রি ফ্রি সেবা ও ওষুধ পেয়ে আমরা অনেকটা উপকৃত হয়েছি।

স্বেচ্ছাসেবক টিমের নেতা আসাদুজ্জামান খান সজল বলেন, করোনাকালীন বিভিন্ন সেবা দিতে যুবকদের নিয়ে ‘৩১৩ ভলেন্টিয়ার গ্রুপ’ গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে ডা. মো. ইমদাদুল হকের সহযোগিতায় প্রতিদিন পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং ও জীবানুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। এছাড়া মাস্ক বিতরণ ও অসহায়দের মাঝে খাবার বিরতণ করা হয়েছে।

ডা. আলহাজ মো. ইমদাদুল হক বলেন, করোনা মোকাবেলা একটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধের মাঝেও সেবা প্রদান করাই আমার কাজ। এ যুদ্ধে আমি আমার নৈতিক দায়িত্ব পালন করছি মাত্র।

তিনি জানান, শুরুতে বিভিন্ন এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপনে বাধা আসে। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজ বাসভবনে মেডিকেল ক্যাম্প গড়ে সেবা দেবেন। ৩১৩ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফ্রি চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এতে ব্যাপক সাড়া মেলে। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অসহায়রা সেবা নিতে আসছেন। তার এ সকল কাজে স্ত্রী শাহিনা ইমদাদ শিল্পী, লন্ডন প্রবাসী ছেলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আবু সায়েম তাপস ও বাংলাদেশ স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে কর্মরত মেয়ে তাপশী রাবেয়া এমি সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে আসছেন।

Advertisement

আব্বাস আলী/আরএআর/এমএস