মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে শিশুদের বুকের দুধ পান করানোর জন্য ‘মাতৃছায়া’ নামে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। আদালতের নারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীরা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে এখানে সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে পারবেন।
Advertisement
সম্প্রতি মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ মো. কামরুল হাসান এবং মাগুরার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমান জিয়া ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারের উদ্ধোধন করেন।
এর দেয়ালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিশু শেখ রাসেলসহ ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের ছবি এই ব্রেস্ট ফির্ডিং কর্নারটিকে আরও দৃষ্টিনন্দন করেছে। আদালত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাগুরার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমান জিয়ার উদ্যোগেই ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। তিনি নিজেই এর নাম দিয়েছেন ‘মাতৃছায়া’।
আইনজীবীরা বলেন, ছায়াঘন বটবৃক্ষের সারি আর শীতল হাওয়া যেমন ক্লান্ত পথিকের ক্লান্তিকে দূর করে। বন্ধুর পথ যখন ক্রমেই মসৃণ হয়, তখন পথ চলার কষ্টটা আর থাকে না। আমরা সৌভাগ্যবান যে, মাগুরা জেলা জজশিপে এমন একজন বটবৃক্ষ পেয়েছি যিনি ছায়া দিয়ে আমাদের চলার পথকে মসৃণ করেছেন।
Advertisement
ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার চালু করার বিষয়ে মাগুরা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মাহমুদ শাহীন বলেন, প্রতিদিন আদালতে অনেক মানুষ আসে। এর মধ্যে অনেক নারী এবং শিশু থাকে। তাদেরকে দীর্ঘ সময় আদালতে অপেক্ষা করতে হয়। বেস্ট্র ফিডিং কর্নারটি চালু করার ফলে এখন থেকে মায়েরা নিরাপদে এখানে সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে পারবেন। নারী এবং শিশুদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা হয়েছে। এটা অত্যন্ত মানবিক উদ্যোগ হিসেবেই মনে করি।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর সব কর্মক্ষেত্র, এয়ারপোর্ট, বাসস্টপ, রেলওয়ে স্টেশনে, শপিং মলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেনো নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এরপর চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি পোশাক কারখানাসহ দেশের সব কারখানায় দুই মাসের মধ্যে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে নিরাপদ পরিবেশে ও স্বাচ্ছন্দ্যে মায়ের বুকের দুধ পান করতে ৯ মাসের শিশু উমাইর বিন সাদী ও আইনজীবী ইশরাত হাসান রিট করেন। ইশরাত হাসান জানান, ২০০৬ সালে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার করার জন্য আইন করা হয়েছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।
Advertisement
আইনজীবী আরও বলেন, সরকার পরিচালিত-নিয়ন্ত্রিত বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল, হাসপাতাল, শপিং মল, বিমানবন্দর, বাস স্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশনের মতো জনসমাগমস্থলে ‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার’ স্থাপনের পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট।
৯ মাস বয়সী এক শিশুর মায়ের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর ওই রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট।
আইনজীবী ইশরাত হাসান জানান, রুল জারির পর সম্প্রতি রেলওয়ে স্টেশন, বাস স্টেশন, বিমানবন্দরে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের কাজ চলছে। কিন্তু গার্মেন্টসসহ দেশের কল-কারখানাগুলোতে এ ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি আমরা দেখছি না। অথচ গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করা নারী কর্মীদের অধিকাংশের বয়স ১৭ থেকে ৩১ বছর। তাদের বেশিরভাগেরই শিশু সন্তান রয়েছে।
তিনি বলেন, গার্মেন্টস, কলকারখানায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার বা বেবি কেয়ার স্থাপনের বিষয়ে নীতিমালা ও আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও কাজ হচ্ছে না। ফলে সম্পূরক আবেদন করে নির্দেশনা চেয়েছিলাম।
এফএইচ/এমএফ/পিআর