স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) ডাক্তারদের মৃত্যুর বড় কারণ বলে মনে করছে জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদ। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্যখাতে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অদক্ষতা ডাক্তারদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।
Advertisement
গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) এক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানে জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও বক্তারা এ কথা বলেন। সংগঠনের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিমের সঞ্চালনায় কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রওশন আরা, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদ সংগঠক অনুপ কুন্ডু ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সংগঠক সামিউল আলম। শুক্রবার (১৯ জুন) ডা. ফয়জুল হাকিম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আলোচনার শুরুতে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ডাক্তার-নার্সসহ সাধারণ মানুষের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করা হয় এবং খুলনায় রোগীর স্বজনদের হামলায় নিহত ডা. মো. আব্দুর রকিব খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ডা. রাকিব খানের হত্যার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিও করা হয় অনুষ্ঠানে।
কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত ডাক্তারদের প্রতিদিন মৃত্যু সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্যখাতে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অদক্ষতা এই ডাক্তারদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।
Advertisement
নকল মাস্ক, নিম্নমানের পিপিই সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করার জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বক্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনা মহামারিকে যারা ব্যবসা বানিয়েছে সরকার তাদের মদদ করে চলেছে।
বক্তারা বলেন, এখনো রাজধানী ঢাকায়, বিভাগীয় হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্ট, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, আয়াসহ চিকিৎসাকর্মীদের প্রত্যেককে প্রতিদিন মাস্ক দেয়া হচ্ছে না। ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্টদের পিপিই সরবরাহ করা হচ্ছে না।
‘প্রথম থেকেই প্রত্যেক হাসপাতালে কোভিড-নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সেবার পৃথক ব্যবস্থা চালু করা কর্তব্য ছিল, তা হলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বিনা চিকিৎসায় রোগী মারা যেত না।’
বক্তারা পিপিই-মাস্ক ব্যবহারে ডাক্তার, নার্স ও টেকনোলজিস্টদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, এর ফলে ডাক্তার-নার্সদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পাবে।
Advertisement
অনুষ্ঠানে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবাদাতা ডাক্তার, নার্স ও টেকনোলজিস্টদের কর্মঘণ্টা হ্রাস করে চার ঘণ্টা করার দাবি জানানো হয়।
সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে হাসপাতালগুলোকে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য প্রস্তত করার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।
করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, সারাদেশে দৈনিক এক লাখ টেস্ট করতে হবে। অবিলম্বে র্যাপিড টেস্ট কিটের ব্যবস্থা করতে হবে।
‘সবকিছু খুলে দিয়ে জনগণের প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সরকারি আহ্বান প্রতারণামূলক। সাভার, গাজীপুর, টঙ্গী প্রভৃতি শিল্পাঞ্চলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার ঘটে চলেছে। এসব এলাকার অনেক কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে না। আবার প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস হতে শ্রমিকদের জীবন রক্ষার জন্য এসব এলাকায় হাজার শয্যার কোনো ফিল্ড হাসপাতালও নির্মাণ করা হয়নি। শ্রমিক এলাকায় প্রতিদিন ২০ হাজার টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়নি। কোভিড-১৯ আক্রান্ত শ্রমিক রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে কারখানা মালিকরা আক্রান্তদের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এভাবে গ্রামে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার হচ্ছে। এসব রোগীদ চিকিৎসার ব্যবস্থা কারখানা মালিকদের করতে হবে’— বলেন বক্তারা।
ঢাকায় ২০ হাজার, চট্টগ্রামে ১০ হাজারসহ সারাদেশে জেলা পর্যায়ে এবং বৃহৎ শিল্প এলাকায় এক হাজার শয্যা সম্বলিত ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণের জোর দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে সরকারকে অধিগ্রহণ করে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কোভিড-১৯ টেস্ট পরীক্ষার গুণগত মান রক্ষা করতে হবে। এর ফলে সঠিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
নতুন ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে কোভিড-১৯-এ সৃষ্ট ভয়াবহ জাতীয় দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব না দেয়ার সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, সরকার জনগণকে রক্ষার বিষয়টি উপেক্ষা করে চলেছে।
‘নিজেদের দায়িত্বহীনতা ও ব্যর্থতাকে আড়াল করতে শাসক শ্রেলি কর্তৃক জনগণ ও ডাক্তারদের মুখোমুখি করার চক্রান্ত’ সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্ট, চিকিৎসাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা।
এমইউএইচ/এইচএ/জেআইএম