খুলনায় চিকিৎসককে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় এজাহারভুক্ত তিন আসামিসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে গাজীপুরের টঙ্গী ও খুলনার রূপসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে খুলনা সদর থানার ওসি আসলাম বাহার বুলবুল জানিয়েছেন।
Advertisement
গ্রেফতাররা হলেন- জমির, আবুল আলী, গোলাম মোস্তফা ও খাদিজা। এদিকে খুলনায় সব সরকারি-বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে। রাইসা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. মো. আব্দুর রকিব খানকে (৫৯) হত্যার ঘটনায় সব আসামি গ্রেফতারসহ বেশকিছু দাবিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) ডাকে এ কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। তবে এর আওতার বাইরে রয়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও করোনা হাসপাতাল।
করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী দেখা ও ভর্তির বিষয়ে গড়িমসির অভিযোগ রয়েছে, তার ওপর বুধবার (১৭ জুন) থেকে শুরু হওয়া চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারও বন্ধ।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন আব্দুল্লাহ বলেন, ডাক্তারদের ধর্মঘট চলে তা আমরা জানতাম না। রোগী নিয়ে এসে এখন দেখি সব বন্ধ। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। শুনছি সব হাসপাতালেই একই অবস্থা।
Advertisement
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনার সভাপতি ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, বাগেরহাট ম্যাটস’র অধ্যক্ষ ডা. রকিব হত্যার প্রতিবাদে বিএমএ খুলনা শাখার আহ্বানে মিলন চত্বরে সর্বস্তরের চিকিৎসকদের বিক্ষোভ সমাবেশ ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং দ্রুত বিচারের দাবিতে কর্মসূচি শেষে এক সভায় চিকিৎসকদের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি এবং জরুরি ও কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট সব চিকিৎসা বহাল থাকার ঘোষণা দেয়া হয়।
আসামিদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচারে সোপর্দ এবং সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, নগরীর মোহাম্মদ নগরের পল্লবী সড়কের বাসিন্দা আবুল আলীর স্ত্রী শিউলী বেগমকে ১৪ জুন সিজারের জন্য রাইসা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেল ৫টায় অপারেশন হয়। বাচ্চা ও মা প্রথমে সুস্থ ছিলেন। পরে রোগীর রক্তক্ষরণ হলে ১৫ জুন সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরাও রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পেরে ঢাকায় রেফার্ড করেন। ঢাকায় নেয়ার পথে ১৫ জুন রাতে শিউলী বেগম মারা যান।
Advertisement
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৫ জুন রাতেই এ ঘটনায় সম্ভাব্য হামলাকারী রোগীর স্বজন কুদ্দুস, আরিফ, সবুরসহ কয়েকজন নারী রাইসা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. রকিবকে লাথি, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এতে তার মাথার পেছনে জখম হয়। তাকে প্রথমে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে শেখ আবু নাসের হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ জুন তার মৃত্যু হয়।
ড. রকিব শুধু রাইসা ক্লিনিকের মালিক নন বাগেরহাট মেডিকেল এসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) অধ্যক্ষ ছিলেন। এছাড়া সিনিয়র এ চিকিৎসক বিসিএস স্বাস্থ্য প্রশাসনে পরিচালক পদমর্যাদায় চাকরি করতেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনার আজীবন সদস্য ছিলেন ডা. রকিব।
আলমগীর হান্নান/এফএ/এমকেএইচ