শিক্ষা

করোনায় প্রাথমিকের ২৪১ আক্রান্ত, শিক্ষকদের দাবি ৫ শতাধিক

করোনাভাইরাসে প্রাথমিক শিক্ষার ২৪১ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে তিনজন শিক্ষক ও একজন কর্মকর্তা মারা গেছেন। এ পর্যন্ত ৪৩ জন সুস্থ হয়েছেন। প্রায় ৫০ জন মুমূর্ষু অবস্থায়। গতকাল বুধবার একদিনে ১৫ জনের করোনা শনাক্ত হলেও এদিন মোট পাঁচজন সুস্থ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) ওয়েবসাইটে করোনা আপডেট থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

Advertisement

তবে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক বলে দাবি করেছেন শিক্ষক নেতারা। তারা বলেন, অনেকে সামাজিক ভীতির কারণে উপসর্গ নিয়ে বাসায় চুপচাপ থাকছেন, কোনো ধরনের পরীক্ষা করছেন না। এ কারণে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা উঠে আসছে না বলে জানান।

দেখা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের তথ্য সংগ্রহ করে ডিপিই’র ওয়েবসাইটে প্রতিদিন তথ্য আপডেট করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রাথমিকের ১৯১ জন শিক্ষক, ২৬ জন কর্মকর্তা, ১২ জন কর্মচারী ও ১২ জন শিক্ষার্থীর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন শিক্ষক ও একজন কর্মকর্তা মারা গেছেন। পর্যাক্রমে এ পর্যন্ত ৪৩ জন সুস্থ হয়েছেন। সুস্থদের মধ্যে ৩০ জন শিক্ষক, পাঁচজন কর্মকর্তা, কর্মচারী দুজন ও ছয়জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

দেখা গেছে, আক্রান্তকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৫, চট্টগ্রামে ৭০, খুলনায় ৯, বরিশালে ১৫, সিলেটে ২৬, রংপুরে ৯ এবং ময়মনসিংহে ৮ জন রয়েছেন। এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. জোবায়দুর রহমানের কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

Advertisement

জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে অন্তত ৫০ জনের অবস্থা মুমূর্ষু। নিজ উদ্যোগেই নানাভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। নিম্ন বেতনের প্রাথমিক শিক্ষকরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বড় ধরনের সংকটে রয়েছেন। অনেকের পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হয়েছেন।

আক্রান্ত শিক্ষকরা জানিয়েছেন, শিক্ষকদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে তাদের কোনো খোঁজখবর নেয়া হয়নি। তবে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের নানা ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কারো চিকিৎসকের পরামর্শ লাগলে সে ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। যেসব শিক্ষক কোভিড-১৯ আক্রান্ত, তাদের বেশিরভাগই নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন কয়েকজন। তবে সম্প্রতি প্রাথমিকের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্তের তথ্য সংগ্রহ কাজ শুরু করে ডিপিই। প্রতিদিন এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে ২৪ ঘণ্টা পরপর ওয়েবসাইটে তথ্য আপডেট করা হচ্ছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে বলেন, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। সারাদেশে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষক কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক শিক্ষক করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না, এ কারণে সঠিক সংখ্যাটাও জানা যাচ্ছে না। অনেকে ঘরে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন, সামাজিক হয়রানির ভয়েও বের হচ্ছেন না অনেকে।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ফরিদপুর সদরপুর উপজেলার যাত্রাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ও চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার দেশখাগড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান। পরে পরীক্ষা করে তাদের করোনা পজিটিভ ধরা পরে। যে কর্মকর্তা মারা গেছেন তিনিও অনেকদিন ধরে উপসর্গ নিয়ে ঘরে ছিলেন, মুমূর্ষু হওয়ার পর তার পরীক্ষা করানো হয়, পরে তিনি মারা যান।

Advertisement

এই শিক্ষক নেতা বলেন, আমরা জাতি গড়ার কারিগর, শিক্ষকরা সামাজিক ভীতির কারণে উপসর্গ নিয়ে ঘরে লুকিয়ে থাকবেন না। উপসর্গ থাকলে দ্রুত পরীক্ষার পরামর্শ দেন তিনি। আমাদের প্রচেষ্টায় মানুষের মধ্যে এই ভ্রান্তি মুছে ফেলতে হবে বলেও তিনি শিক্ষক সমাজকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

ডিপিই’র মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে তার তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের ওয়েবসাইটে যুক্ত করা হচ্ছে। তার চিকিৎসার জন্য সার্বিক সহায়তা দিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান মহামারি যতদিন স্বাভাবিক না হবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হবে। পাশাপাশি দেশের যেখানেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হবেন তাদের তথ্য সংগ্রহ করে সার্বিক সহায়তা দেয়া হবে। আক্রান্তদের সুস্থতায় তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।

এমএইচএম/এমএফ/জেআইএম