‘ভাই, এই অবস্থা কতদিন চলবে? তিন মাসের বাসাভাড়া বাকি পড়েছে ৫৬ হাজার টাকা। বাড়িওয়ালা প্রতিদিন ভাড়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তাহলে বাসা রাখব, অন্যথায় জুলাইয়ের ১ তারিখে বাসা ছেড়ে পরিবারকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে আমি একা মেসে উঠব। প্লিজ ভাই, বলেন না আসলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কী?’
Advertisement
‘ঘরে বসে থেকে থেকে বোরিং হচ্ছি। দোকান তো খোলা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ফটোকপি কিংবা কম্পিউটারের কাজ করতে কেউ দোকানে আসছে না। সেদিন কর্মচারীকে দোকানে আসছি বলতেই সে বলল, সারাদিনে মাত্র ১৫০ টাকার কাজ হয়। দোকানে আসলে আপনার মন আরও খারাপ হবে। তাছাড়া আপনি করবেনটা কী? আমি একাই সামাল দিতে পারব।’
রাজধানীর নীলক্ষেতের একজন বই ব্যবসায়ী এবং একজন ফটোকপির দোকানের মালিক ঠিক এভাবেই ব্যবসায়িক অবস্থা বর্ণনা করে তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছিলেন।
মাত্র মাস চারেক আগেও তারা ছিলেন ভীষণ ব্যস্ত। দোকানের ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, বাসাভাড়া, বাজার খরচ ও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাসহ সব খরচ চালিয়েও মাস শেষে কিছু টাকা সঞ্চয়ও হতো। কিন্তু গত তিন মাসের মধ্যে দুই মাস দোকান সম্পূর্ণ বন্ধ এবং মাসখানেক যাবত খোলা থাকলেও আয়-রোজগার না হওয়ায় তারা পথে বসতে যাচ্ছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে তারা ঢাকা শহরে আর থাকতে পারবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
Advertisement
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ দুজন ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে বলেন, এমন আর্থিক সংকটে পড়তে হবে এমনটা কল্পনাও করিনি। আগামী ছয় মাস এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে সংসার চালানো একেবারেই দায় হয়ে পড়বে।
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে শুধু এই দুই ব্যবসায়ীই নয়; রাজধানীতে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়ছে।
দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় এবং ১৮ মার্চ প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়। বুধবার (১৭ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনের (১০৩তম দিন) তথ্যানুসারে, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৮ হাজার ৪৮৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
তবে সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে সংখ্যাটা আরও বেশি। গতকাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৩০৫ জন। তবে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যেসব রোগী মারা যাচ্ছে তাদের এ সংখ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না।
Advertisement
জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক একাধিক রোগতত্ত্ব এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে জানতে চেয়েছেন করোনাভাইরাস পরিস্থিতি শেষ কবে। তবে তারা কেউই এর সদুত্তর দিতে পারেননি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুরোধে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই সংক্রমণ-মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ আক্রান্ত রোগীর পরিসংখ্যান অনুসারে রাজধানীসহ সারাদেশে সংক্রমণ প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়োলো এবং গ্রিন জোনে ভাগ করে লকডাউন করে নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রেও এলাকা নির্ধারণে কালক্ষেপণ হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিন থেকে প্রতিদিনই দেশের মানুষকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি যেমন-প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া, বাইরে বের হলে অবশ্যই মুখে মাস্ক ব্যবহার করা, নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিংবা সাবান দিয়ে ঘনঘন হাত ধৌত করাসহ নির্দেশনা দেয়া হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ তা মানছে না।
এমইউ/এসআর/পিআর