করোনার এ মহামারিতে অনেক অমানবিক ঘটনার সাক্ষী ময়মনসিংহের অ্যাম্বুলেন্স চালক দেলোয়ার হোসেন। করোনা রোগী কিংবা মৃত ব্যক্তির কাছে যখন নিজের পরিবারের কোনো আত্মীয়-স্বজন যায় না, তখন দেলোয়ার হোসেনের মতো অ্যাম্বুলেন্স চালকরা তাদের নিয়ে ছুটোছুটি করছেন। এমনকি গাড়িতে তোলা এবং নামানোর কাজও করতে হয় তাদের।
Advertisement
এতসব করার পরও তাদের পড়তে হয় কঠিন বিড়ম্বনায়। মাঝে মাঝে কিছু কিছু মানুষের অমানবিক আচরণ কষ্ট দেয় অ্যাম্বুলেন্স চালকদের।
ময়মনসিংহের চরপাড়ায় হঠাৎ দেখা করোনাকালে অমানবিক ঘটনার নীরব সাক্ষী অ্যাম্বুলেন্স চালক দেলোয়ারের। করুণ কণ্ঠে দেলোয়ার যা জানালেন তা শুনলে যে কারও শরীর শিহরে উঠবে।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে করোনায় মারা যাওয়া এক ব্যক্তির লাশ নিয়ে গিয়েছিলাম ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায়। সেখানে আত্মীয়-স্বজনরা লাশ দেখে ধারে কাছেও কেউ আসেনি। এ দৃশ্য দেখে লাশ কয়েকজন মিলে নামিয়ে রাখলাম। অবাক করা ব্যাপার লাশের নিজের পরিবারেরও কেউ ভয়ে কাছে আসেনি। উল্টো সেদিন লাশের আত্মীয়-স্বজনরা আমার অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করেছিল।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যখন করোনায় আক্রান্ত কিংবা মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে ছুটে বেড়াই তখন অনেকের কাছে অবহেলার পাত্র হিসেবেই বিবেচিত হই। কোনো হোটেলে খেতে গেলে খাবার দিতে চায় না। তখন খুব কষ্ট হয়। আমি থাকি মাসকান্দা শান্তিনগর এলাকায়। আমার ১০ বছর বয়সের একটি ছেলে আছে। রাতে যখন বাসায় যাই নিজ এলাকার লোকেরাও অমানবিক আচরণ করে। তখন পরিবার অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। বিশ্বাস হয়তো করবেন না তখন কষ্টে বুকটা ফেটে যায়।
দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, এক ব্যক্তির করোনার মতো উপসর্গ ছিল।যেন তাকে গাড়িতে না তুলি এজন্য সবাই না করেছিল। তবুও মানবিক কারণে তাকে নান্দাইল থেকে ময়মনসিংহে পৌঁছে দিয়েছিলাম। এ অবস্থা অনেকে দেখেছে। এরপর সবাই বলতে থাকল আমিও নাকি করোনায় আক্রান্ত। তখন মনে হচ্ছিল, কাদের জন্য কি করি! তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর অবহেলা পাওয়ার জন্যই কি এসব করি!
এসব বিষয়ে অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি সেলিম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান সময়ে সবার আগে ঝুঁকি নিচ্ছেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। অনেকের নিরাপত্তা সামগ্রীও নেই। শুধু টাকার জন্য নয়, মানবিক কারণে এখনও তারা কাজ করে চলছে। আমরাও সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য তেমন কিছু করতে পারছি না।
তিনি বলেন, এমন অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স চালকদের নিরাপত্তা এবং ঝুঁকির বিষয়টি সরকার বিবেচনা করলে তাদের জীবন রক্ষা পেতে পারে।
Advertisement
একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মান্নান মোড়ল বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সবার মানবিক আচরণ করা প্রয়োজন।
এমএএস/পিআর