জাতীয়

সংক্রমণের কোন পর্যায়ে দেশ, জানেন না রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা

>> করোনা সংক্রমণ উচ্চপর্যায়ে দেশ : স্বাস্থ্যমন্ত্রী>> সীমিত লকডাউনে কখনোই ভালো ফল মিলবে না >> শুরু থেকেই কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং হচ্ছে না সঠিকভাবে

Advertisement

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোন পর্যায়ে আছে দেশ? এখন কি আমরা সংক্রমণের চূড়ায় (পিক) রয়েছি? নাকি এখনও পৌঁছেনি? তা নাহলে চূড়ায় পৌঁছতে আর কতদিন লাগতে পারে? এসব প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।

গত ৩০ মে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভা হয়। সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, সভায় সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, 'বর্তমানে করোনা সংক্রমণ উচ্চপর্যায়ে রয়েছে। ফলে মে মাসের শুরুতে যে সংক্রমণের সংখ্যা ছিল তা এক মাসের ব্যবধানে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া সারাদেশে সংক্রমণের মোট সংখ্যার ৮৫ শতাংশ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায়। ফলে সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি জানান, এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ আলোচনা করেছেন এবং শহর এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় করোনা মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।

Advertisement

রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইতোমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৪৮১ জনে।  (মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৬২ জনে।)

সংক্রমণ ও মৃত্যু প্রতিরোধে সরকার রাজধানীসহ সারাদেশে করোনা আক্রান্ত এলাকাকে রেড, ইয়েলো এবং গ্রিন তিনটি জোনে বিভক্ত করেছে। রেড জোনভুক্ত এলাকাকে লকডাউন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর রাজাবাজারে এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকা অনুসারে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রেড জোনভুক্ত ৫৮টি এলাকাকে লকডাউন করা হবে বলে গত কয়েকদিন ধরে শোনা যাচ্ছে। এলাকাগুলোর নাম প্রকাশ করা হলেও ওসব এলাকা সম্পূর্ণভাবে নাকি নির্দিষ্ট কোনো পাড়া-মহল্লা কিংবা কতটুকু এলাকা লকডাউন করা হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কোন পর্যায়ে দেশ?

Advertisement

জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে একাধিক রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রকৃতপক্ষে কোন পর্যায়ে রয়েছে তা বলা মুশকিল।

কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা কন্টাক্ট ট্রেসিং (আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তূলনামূলকভাবে শনাক্ত করা) সঠিকভাবে করতে পারছি না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইন অনুসারে একজন আক্রান্ত হওয়ার ন্যূনতম ১৪ দিনের মধ্যে তার মাধ্যমে কতজন আক্রান্ত হচ্ছেন তার সঠিক পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে নিয়মিত বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংক্রমণ কোন পর্যায়ে রয়েছে তা জানা সম্ভব হয়। কিন্তু শুরু থেকেই কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং সঠিকভাবে হচ্ছে না।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রমে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছোট ছোট এলাকা সীমিত আকারে লকডাউন করে কখনোই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে না। বৃহত্তর পরিসরে পূর্ণাঙ্গ লকডাউন করা সম্ভব হলে এবং সঠিকভাবে ওই এলাকার কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং নিয়মিত করা হলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, ধানমন্ডি এলাকা রেড জোন ঘোষণা করা হলে শুধু নির্দিষ্ট একটি ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লা বা রাস্তা পূর্ণাঙ্গ লকডাউন করা হলে তাতে সংক্রমণ প্রতিরোধ হয়ত কমবে কিন্তু অন্যান্য এলাকার মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়বে। সুতরাং সম্পূর্ণ ধানমন্ডি এলাকা লকডাউনের আওতায় আনতে হবে।

জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির পক্ষ থেকেও বৃহৎ অঞ্চল নিয়ে লকডাউনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে ওই সদস্য জানান।

কিন্তু স্থানীয় সরকার তথা সিটি করপোরেশন বড় এলাকা লকডাউন সামাল দেয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছে।

রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু লকডাউন দিলেই হবে না বাস্তবিক অর্থে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা কমাতে হলে নাগরিক কমিটি গঠন ও স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করে তাদের নির্দিষ্ট এলাকার তালিকাভুক্ত ঘরবাড়িতে কে কতটুকু দায়িত্ব পালন করবে তা নির্ধারণ করে দিতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সেরকম কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

সংক্রমণ কমাতে সরকারের সাম্প্রতিক তৎপরতা

গত ৩০ মে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠকের শুরুতে স্বাস্থ্য সচিব বিগত ২১ মে'র সভার সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন অগ্রগতি তুলে ধরে বলেন, পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য কারখানা শ্রমিকের জন্য বিজিএমইএ কর্তৃক প্রতিশ্রুত আইসোলেশন সেন্টার এবং হাসপাতাল সুবিধা এখনও চালু করা হয়নি। সরকারি ছুটি শেষ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করা, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা বন্ধ করার জন্য কেইস ডেফিনেশন অনুযায়ী টেস্ট করা, প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট করা, ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে এ বিষয়ে কমিটির দিকনির্দেশনা কামনা করেন তিনি।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। এ জন্য প্রত্যেকের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য মাক্স ব্যবহার না করার শাস্তি উল্লেখ করে সার্কুলার জারি করতে হবে। পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি কোভিড-১৯ চিকিৎসায় টেলিমেডিসিন সুবিধা সম্প্রসারণের তাগিদ দেন।

একই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে জানান, মাস্ক ব্যবহার আবশ্যিক করতে হবে। প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে বাধ্য করতে হবে। প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা প্রদানের জন্য পরীক্ষায় সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে এবং বিজিএমইএকে শ্রমিকদের চিকিৎসা সুবিধা চালুর জন্য চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

বৈঠকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেন এবং স্বল্পমূল্যে মাস্ক সরবরাহ করা এবং মাক্স ব্যবহার না করলে সংক্রামক ব্যাধি আইনে শাস্তির ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। এ ছাড়া একটি ডেডিকেটেড টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে করোনার বিষয়ে তথ্য ও পরামর্শের ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব করেন প্রতিমন্ত্রী।

এমইউ/জেডএ/এমকেএইচ