দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে ভর্তি যুদ্ধ। এই ভর্তি যুদ্ধে নিজেকে সেরা প্রমাণ করে সবাই চাই নিজের পছন্দ মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে, পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে। এক্ষেত্রে নিজের পছন্দ মতো বিষয়ে ভর্তি হতে আবেদন করতে পারেন দেশের ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়খ্যাত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শুরু হয়ে গেছে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার আবেদন প্রক্রিয়া। চলবে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এবং ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৪ নভেম্বর। ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা মুঠোফোনের টেলিটক সংযোগ থেকে আবেদন করতে পারবে। প্রতিষ্ঠা ও বর্তমান অবস্থা : সিলেট শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে এক ছায়া ঘেরা মনোরম পরিবেশে, ১৯৯১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩২০ একর জমির উপর তিনটি বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক ও ২০৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদের অধীনে ২৬ বিভাগে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধার জন্য ছাত্রদের ৩টি এবং ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ২টি আবাসিক হল। এছাড়া ৫টি একাডেমিক ভবন, ২টি প্রশাসনিক ভবন, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র, সিলেটের বৃহত্তর মিলনায়তনসহ রয়েছে অনেকগুলো ভবন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়সের তুলনায় অনেক বেশিই বলা যায়।স্বাগতম সবুজ ক্যাম্পাস : প্রকৃতির অরণ্যে ঘেরা এক সবুজ ক্যাম্পাস শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে সবুজ অরণ্য আর টিলায় ঘেরা প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এটি বাংলাদেশের ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাত দেশের প্রথম বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্ভর একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই রাস্তার দু’পাশে সারি সারি মেহগনি, কড়ই, জারুল, নারকেল গাছের নয়ানভিরাম দৃশ্যের সাথে নিজেদেরকে বিলীয়ে দেন কেউ কেউ। এখান থেকেই শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এছাড়া রাস্তার মাঝ বরাবর নাগেশ্বর গাছ লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে ডিভাইডার। এই প্রধান সড়কের পূর্ব পাশে রয়েছে উপাচার্যের বাসভবন, ডরমেটরি, গেস্ট হাউজ এবং পশ্চিম পাশে রয়েছে ইউনিভার্সিটি স্কুল ও কেন্দ্রীয় মসজিদ, ড. ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবন। প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ দুই লেনের এ রাস্তা পার হলেই গোলচত্বর। গোলচত্বরে রয়েছে বিশাল ফুলের বাগান। এছাড়াও ক্যাম্পাসে রয়েছে পাহাড়ের চূড়ায় দৃষ্টি নন্দন শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘চেতনা৭১’।ডিজিটাল ক্যাম্পাস : ১৯৯১ সাল থেকে চালু হওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সমন্বিত সম্মান কোর্স চালুর পাশাপাশি ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক কোর্সে সেমিস্টার পদ্ধতির প্রবর্তন, ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মুঠোফোনে এসএমএস’র মাধ্যমে ভর্তির কার্যক্রম চালু, একমাত্র শাবিতে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে তারবিহীন নেটওয়ার্ক ওয়াইফাই সুবিধা চালু করা, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলোকে নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখা, নিজস্ব ডোমেইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ই-মেইল সার্ভিস চালু, দেশের প্রথম ও পুর্ণাঙ্গ বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পীপিলীকার উদ্ভাবন, ইলেকট্রনিক পেমেন্ট বা ই-পেমেন্ট সার্ভিস চালু, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যানবাহনের অবস্থান নির্ণয়ের ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন এবং সর্বশেষ মানববিহীন ড্রোন আবিস্কার করে দেশের তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উম্মোচন করেছে।মোট আসন ও অনুষদ : ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ‘এ’ ও ‘বি’ এই দুই ইউনিটে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদের অধীনে ২৬টি বিভাগে মোট আসন সংখ্যা ১৫২৮টি। এর মধ্যে সাধারণ আসন ১৪৪৮টি এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী এবং পৌষ্যদের জন্য মোট ৮০টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে।বিভাগ অনুযায়ী আসন : ‘এ’ ইউনিটে ব্যবসায় প্রশাসন (৭৫), অর্থনীতি (৬৬), ইংরেজি (৭১), সমাজবিজ্ঞান (৬৬), পলিটিক্যাল স্টাডিজ (৬৬), লোক প্রশাসন (৬৬), নৃ-বিজ্ঞান(৬৬), সমাজকর্ম (৬৬) এবং বাংলাসহ (৭১) মোট ৯টি বিভাগে আসন সংখ্যা ৬১৩টি।‘বি’ ইউনিটে পদার্থ বিজ্ঞান (৬৫), রসায়ন (৬৫), গণিত (৮০), পরিসংখ্যান (৮০), বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান (৫৫), জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (৩৫), ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি (৪০), বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি (৩০), কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (৬০), কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স (৫০), ইন্ড্রাটিয়াল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (৫০), সিভিল অ্যান্ড এনভায়মেন্টাল ইনিঞ্জিনিয়ারিং(৫০), পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং(৩৫), আর্কিটেকচার (৩০), ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (৩৫), মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং(৩৫) এবং ভূগোল ও পরিবেশসহ (৪০) মোট ১৭টি বিভাগে আসন সংখ্যা ৮৩৫ টি।আবেদনের যোগ্যতা : বিজ্ঞান শাখা থেকে পাশকৃত শিক্ষার্থীরা ‘এ’ ও ‘বি’ উভয় ইউনিটে এবং মানবিক ও ব্যবসায় শাখা থেকে পাশকৃত শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র ‘এ’ ইউনিটে আবেদন করতে পারবে। আবেদন করার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে এইচ.এস.সি/ সমমান ও এস.এস.সি/সমমান উভয় পরীক্ষায় নূন্যতম জিপিএ ৩.০ সহ মোট ৬.৫ থাকতে হবে। জি.সি.ই ‘ও’ লেভেলে কমপক্ষে ৩টি বিষয়ে বি গ্রেডসহ ৫টি বিষয়ে পাশ এবং জি.সি.ই ‘এ’ লেভেলে কমপক্ষে ২টি বিষয়ে বি গ্রেডসহ ৩টি বিষয়ে পাশ থাকতে হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পয়াড, আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিক্স অলিম্পয়াড, আন্তর্জাতিক পদার্থ বিজ্ঞান অলিম্পয়াড, অন্যান্য স্বীকৃত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পয়াডে স্বর্ণ, রৌপ্য ও বোঞ্জ মেডেল প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে পারবে। আবেদন প্রক্রিয়া : ভর্তি পরীক্ষার আবেদন করার জন্যে একটি প্রিপেইড টেলিটক মোবাইল ফোন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম (SUST), এইচ.এস.সি./সমমান শিক্ষা বোর্ডের নামের কোড, এইচ.এস.সি./সমমান পরীক্ষার রোল নম্বর, পাশের সন এবং এস.এস.সি./সমমান শিক্ষা বোর্ডের নামের কোড, এস.এস.সি./সমমান পরীক্ষার রোল নম্বর, পাশের সন, সাব-ইউনিটের কী ওয়ার্ড (A, B1, B2, B3, B4) লিখে ১৬২২২ নম্বরে SMS করতে হবে। যেমন : SUST স্পেস123456<স্পেস>2015<স্পেস>SYL<স্পেস>654321<স্পেস> 2013<স্পেস> B1)ভর্তি পরীক্ষার সময় ও পরীক্ষা পদ্ধতি : ৭০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষার জন্য সময় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট। ভর্তি পরীক্ষা সম্পূর্ণ বহু নির্বাচনী পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা ১৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯ টায় এবং ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা বিকেল ২টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত রঙিন ছবি ও দুই কপি প্রবেশপত্র আনতে হবে। ভর্তি সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে জানতে চাইলে ০১৫৫৫৫৫৫০০১-৪ হটলাইনে অথবা admission@sust.edu তে ই-মেইল করে যোগাযোগ করা যাবে। অথবা www.sust.edu/admission ভিজিট করে জানা যাবে।তাই এই অরণ্যে ঘেরা ডিজিটাল ক্যাম্পাসে পছন্দ মতো বিষয়ে ভর্তি হতে চাইলে দেরি না করে আজই আবেদন করে ফেলুন।এমএএস/আরআইপি
Advertisement