জাতীয়

মহামারির নিষ্ঠুরতাকে পেছনে ফেলে ওরা ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বাসিন্দা সালেহ আহমদ। গত ৪ জুন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান ৬০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি। মারা যাওয়ার পর সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাড়ির উঠানে পড়ে ছিল লাশ। দীর্ঘ এ সময় লাশ বৃষ্টিতে ভেজার পর শুকিয়েছে রোদে। কিন্তু পরিবারের কেউ এগিয়ে আসেনি লাশের পাশে। ১০ ঘণ্টা পড়ে থাকার পর সেই লাশ দাফন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’।

Advertisement

করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃতের দেহ থেকে করোনা ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করলেও ভয় কাটেনি জনসাধারণের। আতঙ্কে মানুষ মৃতের দাফন পর্যন্ত করতে ভয় পাচ্ছেন। বাবা–মায়ের মৃত্যুর পর সন্তানরা তাদের লাশের পাশে যেতে ভয় পাচ্ছে, দাফনে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, এলাকাবাসী লাশ বহনের খাটিয়া দিচ্ছে না। বেওয়ারিশ লাশ পড়ে থাকছে রাস্তার পাশে। অনেক সময় ঘরে মরে পড়ে থাকছে অনেকে; কেউ কাছে ঘেঁষছে না।

প্রাণঘাতী করোনা মহামারিতে মৃতদের দাফনে এভাবেই কেউ এগিয়ে আসছে না দেখে মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে যাত্রা শুরু করে ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’। চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে সংগঠনটির পথচলা শুরু। সংগঠনটির কার্যক্রমের মূলে রয়েছে কোনো লোক মারা গেলে তাদের দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে পরিবার থেকে কোনো অর্থ বা পারিশ্রমিক তো নেনই না বরং দাফনের যাবতীয় খরচ সংগঠন বহন করে। সংগঠনটির নিজ কার্যালয়ে সদা সংরক্ষিত থাকে কাফনের সাদা কাপড়, কবর খননের সরঞ্জামাদি, কবর খননকারীদের জন্য পিপিইসহ নানা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, মহামারিতে মৃতদের দাফনে ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’র এ উদ্যোগ খুবই আশাব্যঞ্জক। অন্তত মৃত্যুর পর একজন মানুষকে যথাযথ মর্যাদায় বিদায় দেওয়ার প্রক্রিয়ার বিষয়টি মর্যাদাপূর্ণ একটি কাজ।

Advertisement

ইতোমধ্যে শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনটি ১৮ জন মৃতের দাফন করেছে। তার মধ্যে ১১ জনই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এবং বাকিদের উপসর্গ ছিল। কিন্তু এখানেও ছুটে আসেন শেষ বিদায়ের বন্ধুরা। করোনা আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা লোকজনকে এভাবে একের পর দাফন কাফনের ব্যবস্থা করে আসছে সংগঠনটি।

অল্প কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীর উদ্যোগে সংগঠনটি মিরসরাইয়ে যাত্রা শুরু করলেও এটির কার্যক্রম এরই মধ্যে চট্টগ্রামের আনাচে-কানাচে ও পাশ্ববর্তী জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে। বেড়েছে স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যাও। বর্তমানে এ সংগঠনে ২৫০ এরও অধিক সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী সংযুক্ত হয়েছেন।

সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মিরসরাই প্রেস ক্লাবের সভাপতি নুরুল আলম জাগো নিউজকে জানান, মিরসরাইয়ের ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভাসহ মোট ১৮টি ইউনিট গঠন করা হয়। মৃত নারীদের কথা মাথায় রেখে প্রতিটি ইউনিটে ৭ জন পুরুষ স্বেচ্ছাসেবীর পাশাপাশি চারজন করে নারী স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, এই দুর্যোগে মৃত মানুষদের একমাত্র অধিকার দাফনের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে পেরেছি। এর চেয়ে আনন্দের কিছু হতে পারে না। একটি অ্যাম্বুলেন্স ক্রয়ের ফান্ড গঠন চলছে। ইনশাআল্লাহ অল্পকিছু দিনের ভেতর একটি অ্যাম্বুলেন্স কিনতে আমরা সমর্থ হবো।

Advertisement

সংগঠনের সমন্বয়কারী মো. নিজাম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে এ সংগঠনের জন্ম হলেও প্রয়োজনের তাগিদে আমরা এটির একটি স্থায়ী রূপ দিতে চাই। ইতোমধ্যে একটি জায়গার ব্যবস্থা করে সেটি লাশ গোসলের উপযোগী করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলে যেখানেই লাশ দাফনের সমস্যা সৃষ্টি হবে সেখানেই তারা ছুটে যাবেন।’

আবু আজাদ/এসএইচএস/জেআইএম