পাক্কা তিন মাস খেলার বাইরে। গত মার্চের ঠিক ১৬ তারিখ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ দিয়ে শেষ। তারপর আর মাঠে নামা হয়নি, অনুশীলন করারও সুযোগ মেলেনি। করোনা কেড়ে নিয়েছে মাঠে ফেরার সব সুযোগ ও সম্ভাবনা। সব ক্রিকেটার এখন নিজ নিজ বাসায় আবদ্ধ।
Advertisement
একদম হাত পা গুটিয়ে বসে হয়তো নেই। কমবেশি ফিজিক্যাল ট্রেনিং করতে হচ্ছে, করছেনও সবাই। বিসিবির ট্রেনারের বেঁধে দেয়া রুটিন মেনে চলতে হচ্ছে সবাইকে। প্রত্যেক জাতীয় ক্রিকেটার ঘরে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করছেন প্রায় তিন মাস ধরে। পাশাপাশি কেউ কেউ জিমের সামগ্রী কিনে নিজ ঘরেই মিনি জিমের মত বানিয়ে নিয়েছেন।
উদ্দেশ্য একটাই, নিজের শরীরটাকে সুস্থ, সতেজ ও চাঙা রাখা। কিন্তু শুধু শরীর সুস্থ ও সক্ষম রাখলেই চলবে না, মনটাকেও তো ফুরফুরে রাখতে হবে। এই যে মাঠে যেতে না পারা, অনুশীলন করতে না পারা এবং ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা- সেটাও এক রকমের নির্বাসন। এ সময়ে মনের প্রফুল্লতা নষ্ট হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
ক্রিকেটাররা যাতে করে সেই দূর্বলতা কাটিয়ে মানসিকভাবে চাঙা থাকতে পারেন, সেটাই হওয়া উচিৎ এখনকার উদ্যোগ। কারণ দীর্ঘ সময় ঘরে বসে থাকায় ক্রিকেটারদের মধ্যে একরকম একঘেয়েমি চলে আসতে পারে, পাশাপাশি একটা হতাশা ও মানসিক দুর্বলতাও বাসা বাঁধতে পারে মনে। তা কাটাতে দরকার মানসিক দৃঢ়তা।
Advertisement
সে চিন্তা থেকেই টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক এই ক্রিকেটের বাইরে থাকা সময়টাকে ভিন্নভাবে অনুভব ও উপলব্ধি করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। টেস্ট অধিনায়ক অনুশীলন ও খেলতে না পারায় হতাশ না হয়ে বরং এই সময়টাকে ভিন্নভাবে চিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছেন মুমিনুল।
এই করেনাকালীন সময়টাকে আগামীর অন্যরকম সঞ্চয়ের সময় হিসেবে দেখতে চান তিনি। জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে দেশের অন্যতম সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান বলেন, ‘এটা ঠিক যে আমরা সবাই এখন মাঠের বাইরে। খেলা ও অনুশীলন বন্ধ। তবে এই সময়টায় হতাশ না হয়ে, একে আগামীর সঞ্চয় হিসেবে ভাবা যেতে পারে।’
মুমিনুল যোগ করেন, ‘যে কারও জীবনে অন্যসময়ও এমন দিন আসতে পারে। তিন-চার মাস খেলার বাইরে থাকতে হতে পারে। ইনজুরির কারণে ঘরে থাকতে হতে পারে। আবার দল থেকে বাদ পড়েও লম্বা সময় জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলন ও খেলা নাও হতে পারে। কেউ যদি এই করোনার সময়টায় সেই অনাগত ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিজেকে অন্যভাবে তৈরি করে, তাহলে বরং ভালই হবে।’
আরও ব্যাখ্যা করেন, ‘কে কীভাবে এ সময়টায় মানিয়ে নেবেন, কীভাবে নিজেকে ধরে রাখতে পারছেন, এটাও একটা ভাল প্র্যাকটিস হতে পারে। এই মাঠের বাইরে থাকা থেকেও একটা শিক্ষা নেয়া সম্ভব। আগামীতে যদি কেউ আহত হয়ে মাঠের বাইরে ছিটকে যান, তখন কী করবেন? দীর্ঘসময় মাঠের বাইরে থেকেও কীভাবে শরীর ও মনকে আগামীর জন্য তৈরি রাখা সম্ভব- সেই প্র্যাকটিসটা এখন হয়ে যাচ্ছে। যে কেউ চাইলেই এ অনুভব ভেতরে জাগিয়ে তুলতে পারে।’
Advertisement
মুমিনুলের শেষ কথা, ‘মানুষের অসাধ্য কিছু নেই। এই তিন-চার মাস সময়কে যেকোনভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। সে ক্রিকেটার হোক কিংবা অন্য পেশার মানুষ। এখন আসল কথা হলো, লক্ষ্যে স্থির থাকা। আমি অনুশীলন করতে পারছি না, খেলাও সম্ভব হচ্ছেনা। ঘরে হালকা অনুশীলনে কেটে যাচ্ছে সময়। আমার জীবনে আগামীতেও এমন কঠিন সময় আসতে পারে। এই ভেবে যদি কেউ এ সময়ে নিজেকে আগামীর জন্য তৈরির চেষ্টা করে, সেটাও সম্ভব, সেটাও এক ধরনের চর্চা।’
এআরবি/এসএএস/পিআর