সিলেট নগরের মিরকবক্স টুলার মানিকপীর টিলা ও আশপাশ রাস্তায় হাজারো জনতার ঢল। শেষবারের মতো বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে দেখতে এসেছেন সবাই।
Advertisement
কামরানের মরদেহ যখন কবরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন তার ছেলে চিকিৎসক আরমান আহমেদ শিপলু। এ সময় দলীয় নেতাকর্মী, ভক্তসহ সর্বস্তরের জনতার কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে মানিকপীর টিলা এলাকা।
হাজারো মানুষের কান্নাভেজা চোখ আর গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরের মায়া ত্যাগ করে মা-বাবার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন জনতার মেয়র কামরান। এই বিদায় চিরবিদায়; এই বিদায় প্রিয় মানুষটিকে আর স্পর্শ করতে না পারার বিদায়। দাফন শেষে বুকে শোকের পাথর চেপে ঘরে ফেরেন সবাই।
কামরানের জানাজায় মানুষের ঢল
Advertisement
দাফন শেষে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এ সময় অঝোরে কাঁদেন কামরানের ছেলে আরমান আহমেদ শিপলু। মোনাজাত শেষে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বাড়ি ফেরেন। সঙ্গে ফেরেন দলীয় নেতাকর্মী ও কামরানের ভক্তরা।
জনতার মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের কাছ থেকে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে দূরে রাখতে পারেনি করোনাভাইরাসের ভয়। করোনাকে উপেক্ষা করে হাজারো মানুষের চোখের জল, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় শেষ বিদায় জানানো হলো সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে।
সোমবার (১৫ জুন) দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে মানিকপীর টিলায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মা-বাবার কবরের পাশে কামরানকে দাফন করা হয়।
কামরানের লাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদছেন ছেলে শিপলু
Advertisement
এর আগে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান নেতাকর্মীরা।
জনসমাগম এড়াতে কামরানের জানাজার সময়সূচি ঘোষণা না করা হলেও সকাল থেকে বাসভবন ছড়ারপারের সুগন্ধায় নেতাকর্মীসহ লোকজন আসতে শুরু করেন। প্রিয় নেতার মরদেহ বাসায় আসার পর হাজারো নেতাকর্মী কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাসায় মরদেহের গোসল শেষে খাটিয়ায় করে নিয়ে যাওয়া হয় ছড়ারপার জামে মসজিদে।
বাদ জোহর ছড়ারপার জামে মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অল্পসংখ্যক লোক জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। বদরউদ্দিন আহমদ কামরান এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তেন। প্রথম জানাজার পর দ্বিতীয় জানাজার জন্য মরদেহ মানিকপীর কবরস্থানে নেয়া হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ জনসমাগম ছাড়াই দাফন করার নির্দেশনা রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের।
কিন্তু সেখানে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা-ভয় কাজে আসেনি। ভয়কে উপেক্ষা করে কামরানের জানাজায় ঢল নামে মানুষের। কামরানকে বলা হয় গণমানুষের নেতা। ‘নগরবাসীর প্রিয় নাম, বদরউদ্দিন কামরান’ স্লোগানও দিতেন তার অনুসারীরা। সোমবার কামরানের জানাজায় এই স্লোগানের সত্যতা মিলল শেষবার। কারণ তিনি ছিলেন জনতার মেয়র।
কারও সান্ত্বনায় কান্না থামেনি শিপলুর
জানাজা শেষে জেলা আওয়ামী লীগ, মহানগর আওয়ামী লীগ ও সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কামরানের মরদেহে ফুল দেয়া হয়। এ সময় সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এই সভাপতির প্রথম জানাজা শেষে মানিকপীর টিলায় দ্বিতীয় জানজায়ও জনতার ঢল নামে। নেতাকর্মীদের শব্দ করে কাঁদতে দেখা গেছে।
সোমবার (১৫ জুন) রাত ৩টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।
দাফন শেষে কামরানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত
দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স কামরানের ছড়ারপারস্থ বাসায় প্রবেশ করে। অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন দলীয় নেতাকর্মী ও প্রতিবেশীরা।
মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই কামরানের বাসভবনে সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ এসে ভিড় জমাতে থাকেন। তাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য ছুটে আসেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনের লোকজন ও সাংবাদিকসহ সব স্তরের মানুষ।
গত ৫ জুন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় মেয়র কামরানের করোনা পজিটিভ আসে। ওই দিন থেকে বাসায় চিকিৎসা দেয়া হলেও ৬ জুন সকালে বমি আর জ্বর নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে বমি ও জ্বর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হলেও অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছিল না। পরে অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় ৭ জুন তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ছামির মাহমুদ/এএম/পিআর