বিশেষ প্রতিবেদন

দেশে আরো ১২টি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হবে

অদম্য এক নারীর হাত ধরে এগিয়ে চলছে হাইটেক পার্কের নির্মাণ কাজ। দেশের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে নারী নেতৃত্ব অনেকটা কম দেখা গেলেও হাইটেক পার্কের ক্ষেত্রে বিষয়টি ব্যতিক্রম। এখানকার শীর্ষ পদের (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) দায়িত্বে আছেন একজন নারী। মিষ্টিভাষী এই কর্মঠ নারীর নাম হোসনে আরা বেগম। যিনি তার মেধা ও মননকে দিয়ে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত করে যাচ্ছেন।সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন হাইটেক পার্কের পটভূমিসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে। বলেছেন, কীভাবে হাইটেক পার্ক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রধান উপকরণ। সঙ্গে ছিলেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রফিক মজুমদার।জাগো নিউজ : বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে হাইটেক পার্কের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলুন?হোসনে আরা বেগম : ১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় যা বর্তমান সরকারের আমলে বাস্তবে রূপ লাভ করছে। দীর্ঘ ১৪ বছর পর হাইটেক পার্ক আলোর মুখ দেখছে। কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পায়ন, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান এবং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ইন্ড্রাস্ট্রির উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটাবে। এটি হবে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের একটি সফল মাইলস্টোন। হাইটেক পার্ক দেশের অর্থনেতিক অগ্রগতিতেও বিরাট ভূমিকা রাখবে। যে কারণে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।জাগো নিউজ : একজন নারী হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির মতো স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আপনার অনুভূতি কী?হোসনে আরা বেগম : ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল অথরিটিতে যোগ দেয়ার সময় ভাবতাম এই সেক্টরটি তরুণ প্রজন্মের জন্য। এখানে বয়স্কদের কাজ করার বেলা বুঝি শেষ। পরে সাহস করে দলবল নিয়ে কাজ শুরু করলাম। এখন সবকিছু অনেকটা বুঝে এসেছে। সহজ মনে হচ্ছে সবকিছু। জাগো নিউজ : আপনি তো সরকারি প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে ভিন্ন কিছু মনে হচ্ছে কি-না?হোসনে আরা বেগম : তথ্যপ্রযুক্তিতে চলমান প্রক্রিয়া কম। এখানে সবই সৃষ্টিশীল। সৃষ্টির আনন্দই আলাদা। এখানে যেদিন যোগদান করেছি সেদিন থেকে প্রতিদিনই মনে হচ্ছে নতুন কোনো কাজের সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন কোনো কিছুর বিষয়ে মানুষের আগ্রহ ও কৌতুহল যেমন বেশি থাকে তেমনি নতুন কিছু নিয়ে কাজ করতে গিয়েও মানুষ উৎফুল্ল ও আনন্দিত থাকে। জাগো নিউজ : কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যা বা প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে কি-না?হোসনে আরা বেগম : সমস্যা হচ্ছে জনবল সংকটের কারণে। অর্গানোগ্রামে ৭৬টি পদ সৃষ্টি করা রয়েছে। অথচ নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৫৬ জন। এখনো ২০টি পদ শূন্য রয়েছে। কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। দুইজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের দরকার জরুরি ভিত্তিতে। বেতন কাঠামো দুর্বল হওয়ায় ইতোমধ্যে দুইজন কম্পিউটার অপারেটর অন্যত্র চলে গেছেন। জনবলের সংকটের কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। তবে এ সমস্যা অচিরেই সমাধান হবে বলে আশা করছি।জাগো নিউজ : হাইটেক পার্কের পরিধি ও সর্বশেষ পরিস্থিতি বিষয়ে কিছু বলবেন?হোসনে আরা বেগম : কালিয়াকৈরে ২৩২ একর জমির এ পার্কটিকে পাঁচটি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। সামিট টেকনোপলিস ও ইনফিনিটিইনফোসিস দুই এবং পাঁচ নম্বর ব্লকের উন্নয়ন করবে। ব্লক দুই ও পাঁচে জমির পরিমাণ যথাক্রমে ৬২ ও ২৯ একর। চুক্তি অনুযায়ী সামিট টেকনোপলিস এ দুটি ব্লকে ২০৭ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। দুই নম্বর ব্লকে মাল্টি টেনেন্ট বিল্ডিং, কনভেনশন সেন্টার, হোটেল, কাস্টম ইনফ্রাস্টাকচার, ওয়্যার হাউজ এবং শিল্প এলাকার উন্নয়ন করা হবে। সম্প্রতি তিন নম্বর ব্লকের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।২৩২ একরের এ পার্কের ৯৮ দশমিক ৯ একর ভূমি আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী রোড এবং উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। বাকি ১৪ দশমিক ৫১ মিলিয়ন বর্গফুট এলাকা বাণিজ্যিক, আবাসিক ও অনান্য প্রয়োজনে ব্যবহৃত হবে।জাগো নিউজ : আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা বলবেন?হোসনে আরা বেগম: ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে দেশের পাঁচটি বিভাগ ও সাতটি জেলা শহরে আরো ১২টি  হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হবে। এসবের পরিকল্পনা চুড়ান্ত হয়ে গেছে।জাগো নিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদহোসনে আরা বেগম : আপনাকেও ধন্যবাদ।আরএম/বিএ/এআরএস/পিআর

Advertisement