জাতীয়

ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব ছিল

রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে আগুনে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং রাজউকের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদন দাখিলের পর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২২ জুন নির্ধারণ করেছেন আদালত।

Advertisement

ফায়ার সার্ভিসের দাখিল করা প্রতিবেদনে মারা যাওয়া পাঁচ ব্যক্তিকে বাঁচানোর বিষয়ে বলা হয়, 'ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে অগ্নিদুর্ঘটনা চলাকালে আগুন নেভাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো বলে মনে করে তদন্ত কমিটি। ইমার্জেন্সি অ্যালার্ম বাজানো, রোগী অপসারণ ও হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ দলকে জরুরি উপস্থিত হতে অনুরোধ করলে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড ও রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো। এ ছাড়া এসি থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হতে দেখেও কর্মরত উপস্থিত ব্যক্তিদের (ডাক্তার, তিনজন নার্স ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী) আগুন নেভানোর ব্যাপারে ফায়ার এক্সটিংগুইশার (অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র) বা অন্যান্য আগুন নেভানোর সরঞ্জামাদি ব্যবহারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।'

রোববার (১৪ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল বেঞ্চে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার তদন্ত প্রতিবেদনগুলো তুলে ধরেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাঁচ সদস্যের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, 'অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুন নেভাতে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের গাফিলতির কারণে ঘটনাটি ঘটে বলে তদন্ত কমিটি মনে করে। অগ্নিকাণ্ডের সময় অগ্নিনিরাপত্তা অফিসার উপস্থিত ছিলেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে সার্বক্ষণিক ফায়ার সেফটি অফিসার ও অগ্নিনির্বাপণকারী দলের সদস্যদের উপস্থিত থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল। আইসোলেশন সেন্টারে সব প্রকারের অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন করা দরকার ছিল। ইউনাইটেড হাসপাতাল স্পর্শকাতর এলাকায় অবস্থিত। সেখানে দেশি-বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিতে আসেন। এ ধরনের স্পর্শকাতর এলাকায় সেবাপ্রদানে পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া এ ধরনের আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ ঠিক হয়নি। অস্থায়ী সরঞ্জামাদি দ্বারা তৈরি না করে স্থায়ী অথবা অগ্নি প্রতিরোধযোগ্য নির্মাণসামগ্রী দ্বারা এ ধরনের আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করা উচিত ছিল।'

Advertisement

হাইকোর্টে দাখিল করা রাজউকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ করে। কিন্তু রাজউকের কোনো ধরনের অনুমোদন তারা নেয়নি।'

ডিএমপির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'অগ্নিকাণ্ড সংঘটন ও তা প্রতিরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল।'

এ ছাড়া তিন সরকারি সংস্থাই তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামাদির বেশিরভাগই ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ ও অকেজো।

অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সুপারিশ

Advertisement

ইউনাইটেড হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে সার্বক্ষণিক ফায়ার সেফটি অফিসার, কার্যকরী অগ্নিনির্বাপণকারী দলের সদস্যদের সরঞ্জামসহ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ ও ফায়ার অ্যান্ড ইভাকুয়েশন ড্রিল করা এবং যথাযথভাবে রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণ করার সুপারিশ করেছে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি।

এ ছাড়া হাসপাতালে কর্মরতদের মধ্যে যারা রোগীর সঙ্গে অবস্থান করেন, তাদের মধ্য থেকে ২৫ ভাগ জনবলকে অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ভবনের বেইজমেন্টে অফিস, স্টোর, কিচেন, ডাইনিং ইত্যাদি স্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বেজমেন্ট শুধু গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে বলে কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে।

গত ২৭ মে রাতে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে আগুনে পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন সরকারি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

শুনানিতে হাসপাতালের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান আদালতে বলেন, তদন্ত রিপোর্টগুলো দেখে আমরা আমাদের ব্যাখ্যা দাখিল করতে চাই। এরপরই আদালত তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে ২২ জুন এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।

এফএইচ/জেডএ/এমএস