করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যখন আউশ ধানের বীজতলা, ওলকচু, শাকসবজি, আম, পেঁপে, কলাসহ বিভিন্ন ফসলে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছিলেন ঠিক তখনই উপকূলীয় খুলনার কয়রায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে বেড়িবাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষের লোনা পানিতে তলিয়ে গেল কৃষকের ক্ষেত। সেই পানি সরে যাওয়ার আগেই শুরু হয়েছে অতিবৃষ্টি।
Advertisement
২ নম্বর কয়রা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক বিধান মণ্ডল ধারদেনা করে ১ বিঘা জমিতে ওল, কচু, হলুদসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছিলেন। আগাম জাতের এসব সবজি ওঠানোর কথা ছিল কয়েকদিন পর। দাম ভালো থাকায় তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন সবজি বিক্রির টাকায় দেনা শোধের পর কিছু ধান কিনবেন, ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খরচ যোগাবেন। কিন্তু ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষের লোনা পানিতে সম্পূর্ণভাবে ভেসে গেছে তার সবজি ক্ষেত। তার স্বপ্ন এখন আর পূরণ হবে না।
এভাবে স্বপ্নের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খুলনার কয়রা উপজেলার চার ইউনিয়নের হাজারো কৃষক। দুই নম্বর কয়রা গ্রামের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধে দাঁড়িয়ে লোনা পানিতে তলিয়ে থাকা সবজি ক্ষেত দেখাচ্ছিলেন আর আফসোস করছিলেন বিধান।
তিনি বলেন, ১ বিঘা ক্ষেতের মধ্যে প্রায় দশ কাঠা জায়গায় দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের ৫০০ পিস ওল, ৫০ কেজি কচু ও হলুদ, বাকি ১০ কাঠা জমিতে পেঁপে, কলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, পুঁইশাকসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছিলাম। বীজ ও পত্তনি খরচসহ খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। আগাম ওঠাতে পারলে লাখ টাকায় বিক্রি হত। এখন সব শেষ।
Advertisement
পাশের এক নং কয়রা গ্রামের হরিদাস বিশ্বাস দেখাচ্ছিলেন তার বসতবাড়ির সঙ্গে প্রায় ১২ কাঠা জমিতে লাগানো ওল, কচু, হলুদ, আলু সহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত। দীর্ঘ ২০ দিন যাবত কোমর পানিতে ডুবে আছে।
তিনি বলেন, সারা বছর সবজি বেচে সংসার চলে তার। তার প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন সে নিঃস্ব।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ৬৩৩ হেক্টর জমিতে আউশ বীজতলা, শাকসবজী, পেঁপে, কলা, সূর্যমুখী, মুগ, তিল, আম ইত্যাদি ফসল আবাদ হয়েছিল। এরমধ্যে আম্ফানের আঘাতে ৫৫২ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। আর বাঁধ ভেঙে উপজেলার উত্তর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী, মহারাজপুর, কয়রা সদরসহ ৪ ইউনিয়নের প্রায় ৩৩শ হেক্টর আবাদি জমি লোনা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে প্রায় কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া চলতি আমন মৌসুমে এই ৩৩শ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদনেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মিজান মাহমুদ বলেন, এ মুহূর্তে লবণ পানি দ্রুত নিষ্কাশন ও প্রচুর বৃষ্টিতে লবণের মাত্রা কমে গেলে পুনরায় ফসল আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমনের বীজতলা তৈরির কথা, লবণ পানি নিষ্কাশন দেরিতে হলে বিকল্প হিসেবে কৃষকদের লবণ সহিষ্ণু জাতের বীজতলা তৈরির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
Advertisement
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক পংকজ কান্তি মজুমদার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে আসবে বলে আশা করা যায়। আর এলে কয়রাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাখা হবে।
আলমগীর হান্নান/এফএ/জেআইএম