দেশজুড়ে

করোনা প্রতিরোধক ডিভাইস আবিষ্কারের দাবি বরিশালের দুই উদ্ভাবকের

করেনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মূলত ভাইরাসটি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তা একজন সুস্থ ব্যক্তিকে আক্রান্ত করে। আক্রান্ত রোগীর নিঃশ্বাস ত্যাগের সময় নির্গত ভাইরাসটি মেরে ফেলা হলে অন্য কেউ সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। এমন ভাবনা থেকে প্রায় দু’মাস চেষ্টা চালিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের নিউরোমেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. এইচ এম মাসুম বিল্লাহ্ এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রেহানা পারভীন যৌথ উদ্যোগে উদ্ভাবন করেছেন করোনা প্রতিরোধক ডিভাইস (কিট)। তারা ডিভাইসটির নাম দিয়েছেন কোভিট কিট বা কোভিট কিলিং কিট।

Advertisement

বর্তমানে ডিভাইসটি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্স কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন পেলে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব রোধে ব্যাপক সফলতা আসবে বলে দাবি করেছেন ডিভাইসটির উদ্ভাবকরা।

করোনা প্রতিরোধী ডিভাইস তৈরি প্রজেক্টের প্রধান ডা. এইচ. এম মাসুম বিল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মূলত ভাইরাসটি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সুস্থ ব্যক্তিকে আক্রান্ত করে। প্রায় দু’মাস আগে এ নিয়ে ভাবতে শুরু করি কিভাবে আক্রান্ত রোগী নিঃশ্বাস ত্যাগের সময় নির্গত ভাইরাসটি ধংস করা যায়। যাতে ভাইরাসটি থেকে অন্য কেউ আক্রন্ত না হন। এরপর একটি ডিভাইস তৈরি শুরু করি। প্রথমদিকে একাই ছিলাম। ডিভাইস তৈরির মাঝ পথে গিয়ে ডিজাইন (আকৃতি) নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এসময় যুক্ত হন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রেহানা পারভীন। এরপর ডিভাইস তৈরির কাজ এগোতে থাকে।

ডিভাইস তৈরি হলে অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্স কাউন্সিলে (বিএমআরসি) পাঠানো হয়। তাদের ডিভাইসটি দেখে পছন্দ হয়।পরে তারা ডিভাইসটির গুণগত মান ও কার্যকারিতা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগে পাঠায়। ইতোমধ্যে ব্যবহার উপযোগী হিসেবে ছাড়পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগ। বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্স কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে সেটি।

Advertisement

উদ্ভাবক ডা. এইচ. এম মাসুম বিল্লাহ বলেন, ডিভাইসটি তৈরিতে খরচ পড়েছে মাত্র ১৫০০ টাকা। তবে যারা স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারেন না, তাদের উপযোগী করতে গেলে ডিভাইসটিতে আরো কিছু সংযোজনের প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকার মতো খরচ দাঁড়াবে। বর্তমানে কিছু দাফতরিক জটিলতা ও সীমাবদ্ধতার কারণে অনুমোদন পেতে দেরি হচ্ছে। তবে এই ডিভাইসটির কার্যকারিতা ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগের চেয়েও বেশি। বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্স কাউন্সিল (বিএমআরসি) করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাব রোধে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে শিগগিরই ডিভাইসটির অনুমোদন দেবে বলে আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষের কথা ভেবেই ডিভাইসটি তৈরি করেছি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে ডিভাইসটির কথা জানতে পেরে কানাডার একটি সংস্থা সহ বিদেশি দু’টি সংস্থা উৎপাদনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্ত সে প্রস্তাব নিয়ে এখনই মাথা ঘামাচ্ছি না। তাদের কাছে আমি অপারগতা প্রকাশ করেছি। আমরা চাচ্ছি ডিভাইসটি ব্যবহার করে দেশের মানুষ উপকৃত হোক। যদি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্স কাউন্সিল (বিএমআরসি) থেকে অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হই তখন কানাডাসহ আরও একটি সংস্থার ওই প্রস্তাব ভেবে দেখা যাবে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রেহানা পারভীন বলেন, ডিভাইসটি তৈরির পর আমরা কয়েকজনকে ব্যবহার করিয়েছি। এটি হালকা ও সবসময় বহনযোগ্য করে তৈরি করা হয়েছে। ডিভাইসটির একটি অংশ মুখের সঙ্গে জুড়ে থাকবে। মুখে একটি ভেন্টিলেশন মাস্ক দিয়ে পাইপের মাধ্যমে একটি জারে যাবে। সেখানে নির্গত নিঃশ্বাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড পুরোপুরি ধ্বংস করা হবে। আরেকটি পাইপ দিয়ে করোনাভাইরাস মুক্ত হয়ে নিঃশ্বাস পরিবেশে যাবে। ডিভাইসটি তৈরিতে এর সঙ্গে আরও কিছু ব্যবহার করা হয়েছে। তবে বাজারে আসার আগে গোপনীয়তার স্বার্থে এর ডিজাইন সম্পর্কে বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না। এটি ব্যবহারের ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্য কেউ সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ডিভাইসটি সম্পর্কে আমি নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছি। এ আবিষ্কার কার্যকরী হলে যুগান্তকারী অবিষ্কার হতে পারে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে এই ডিভাইসটি আশা করি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Advertisement

এফএ/পিআর