স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস আসছে, তা আমরা আগে থেকেই জানতাম। করোনার আক্রমণের পর তিন মাস ধরে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। অথচ আরও অনেক আগে থেকেই আমরা প্রস্তুতি শুরু করতে পারতাম। সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হলে করোনা মোকাবিলা এখন অনেক সহজ হতো।’
Advertisement
শনিবার (১৩ জুন) আর্ক ফাউন্ডেশন ও সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স (সিএলপিএ) ‘করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক অনলাইন টকশোর আয়োজন করে। সেখানে এমন মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক এ মহাপরিচালক।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যুর সারি দীর্ঘ হচ্ছে। আমরা যদি এভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের হারাতে থাকি তাহলে দেশের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তাই সবার আগে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। একটি যুগোপযোগী কার্যকর স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমাদের ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যার মধ্যে মধ্যম-মেয়াদি পাঁচ বছরের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
টকশোতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক পরামর্শক মোজাহেরুল হক, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক এবং আইনজীবী ও নীতিবিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলমও অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. রুমানা হক।
Advertisement
আলোচনায় মোজাহেরুল হক বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য-সচেতনতায় অনেক পিছিয়ে আছি। একই সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাপনাও শক্তিশালী নয়। এখানে আমাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে, এর বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা আরও উন্নত করতে হবে। জেলা হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন, ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা, আইসিইউ ব্যবস্থা রাখতে হবে। পাশাপাশি গ্রাম থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে শহরে যাতে স্পেশালাইজড চিকিৎসা নেয়া যায় সেজন্য ইফেক্টিভ রেফারেল ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে।’
অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ‘আমরা চিকিৎসা-ব্যবস্থা নিয়ে ভুলের মধ্যে আছি। সবগুলো জায়গা খতিয়ে দেখে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে চিকিৎসকরা যাতে চিকিৎসা দিতে ভয় না পান সেজন্য সব সেক্টরের চিকিৎসককে ঝুঁকিভাতা দিতে হবে। দেশে একটি শক্তিশালী মেডিসিন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই আমরা আমাদের সমস্যা মোকাবিলা করতে পারব।’
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে, স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা মানে শুধু চিকিৎসা-ব্যবস্থা নয়। দেশে একটি কার্যকর জনস্বাস্থ্য-ব্যবস্থা গড়ে তোলা স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট দফতর বা সংস্থাগুলোর একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য একটি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সবাইকে নিয়ে একটি ডাটাবেজ প্রস্তুত এবং একটি ন্যাশনাল হেলথ কমান্ড তৈরি করে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি এ সংশ্লিষ্ট দেশের প্রচলিত আইন ও বিধানের কার্যকর প্রয়োগ, প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।’
মিটিং সফটওয়্যার জুম’র মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। আলোচকরা সরাসরি যোগ দেয়া অংশগ্রহণকারী এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। পিডি/এমএআর/জেআইএম
Advertisement