টানা তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজার সৈকতে ঈদ উৎসবের আবহ শুরু হয়েছে। যান্ত্রিক জীবনের একগুয়েমি কাটাতে পরিবার পরিজন নিয়ে দরিয়ানগরে বেড়াতে এসেছেন হাজারো পর্যটক। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বৃহস্পতিবারের একদিনের ছুটির সঙ্গে শুক্র-শনি দু’দিনের সাপ্তাহিক ছুটি ভ্রমণপ্রেমীদের বেড়ানোর সুযোগ এনে দিয়েছে। এ ছুটিকে উপলক্ষ্য করে কক্সবাজারের তারকামানের হোটেলসহ সব ধরনের আবাসিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে।এসব পর্যটক কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, বিভিন্ন পূজামণ্ডপ, দরিয়ানগর, হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানী, মহেশখালী, সোনাদিয়া, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, রামু বৌদ্ধ পল্লীসহ দর্শনীয় স্থানে ভিড় জমাচ্ছেন। পর্যটকরা ভিড় করছেন শহরের বার্মিজ মার্কেট গুলোতেও। একদিকে পর্যটকদের ভিড় অন্যদিকে দুর্গাপূজার আয়োজনকে ঘিরে তীব্র যানজটে হিমশিম খেতে হচ্ছে শহরে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকার নূর-এ-ইলাহী রিপন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। কাজের চাপে স্ত্রী ও দু’কন্যাকে একান্ত সময় দিতে পারেন কম। তিনদিনের টানা ছুটিতে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন পরিবার নিয়ে। তিনি জানালেন, পূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলে তিনদিন সরকারি সব অফিস বন্ধ। এ সুযোগে পরিবারকে সময় দিতে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। সাগর দেখার পাশাপাশি পরিবারের সবাইকে রামুর রাবার কারখানা পরিদর্শন করে বাড়তি আনন্দ পেয়েছি।কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, টানা তিনদিনের ছুটি কক্সবাজারকে ঈদের আমেজ এনে দিয়েছে। অনেক হোটেল কম-বেশি অগ্রিম বুকিং পেয়েছে।কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সদস্য মুহাম্মদ শাহজাহান খুলু বলেন, শীত মৌসুমের আবহ শুরু হওয়ায় বিকেলে শীতল আবহাওয়া বিরাজ করায় সৈকতে পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনের ভিড় বাড়ছে। আজ (শুক্রবার) প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান উপলক্ষে এ উপস্থিতি চলমান সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বাড়বে। বিক্রিও বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও চাঙা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার-এর সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, টানা তিনদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। তারকা মানের হোটেলসহ প্রায় আবাসিক হোটেল ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বুকিং করা ছিল। কক্সবাজার সৈকতে যেভাবে পর্যটক উপস্থিতি বেড়েছে সেভাবে সেন্টমার্টিনসহ অন্য এলাকাতে যাচ্ছেন তারা। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে কেয়ারি সিন্দবাদ, কেয়ারি ক্রুজ ও বে ক্রুজ নিয়মিত ৮০০ থেকে এক হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন নিয়ে যাচ্ছে।সবার পাশাপাশি বিপদাপন্ন পর্যটকদের সহায়তায় পুরোপুরি সতর্কাবস্থানে রয়েছে সৈকতে কাজ করা লাইফগার্ড কর্মীরা। রবি লাইফ গার্ড’র ইনচার্জ ছৈয়দ নূর বলেন, অনাকাঙ্খিত ঘটনায় পড়ে মজার ভ্রমণ বিষাদময় না করতে সৈকতে গোসলে নামা পর্যটকদের সতর্ক করা হচ্ছে। সঙ্গে বিপদাপন্নদের উদ্ধারে ওয়াচ টাওয়ারে বসে চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।একদিকে পর্যটন মৌসুমের শুরু অন্যদিকে দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন ও টানা ছুটিতে আগত বাড়তি পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ ও র্যাব। র্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্প সূত্র জানায়, পর্যটকদের নিরাপত্তায় র্যাব নিয়মিত টহল জোরদার করেছে। বিশেষ বিশেষ স্থানে চালানো হচ্ছে টহলও।কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফেরদৌস আলী চৌধুরী ও ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি নেই। সাদা পোশাকেও প্রতিটি স্পর্শকাতর এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।তারা আরো জানান, তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকদের অতিরিক্ত আগমনের উপর ভিত্তি করে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গেল ঈদের সময় যেভাবে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল এবারো একইভাবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দিনে-রাতে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ।সায়ীদ আলমগীর/বিএ
Advertisement