বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) সুবিধা-সমৃদ্ধ এ কেবিন ব্লকে দুই শতাধিক রোগীকে ভর্তি ও চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হবে। প্রস্তুতির কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে এবং আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই এটি করোনা চিকিৎসার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করা হবে।
Advertisement
বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কেবিন ব্লক করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড থাকবে। এর মাধ্যমে দুই শতাধিক করোনা রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ডা. বড়ুয়া বলেন, ‘হাসপাতালে এতদিন রোগী ভর্তি করা না হলেও শাহবাগের বেতার ভবনে ফেভার (জ্বর) ক্লিনিকে ইতোমধ্যেই কোয়ারেন্টাইন সেন্টার চালু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪০ জন রোগীকে সেখানে কোয়ারান্টাইনে রেখে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে।’
Advertisement
বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা গেছে, গত ১ মার্চ শাহবাগের বেতার ভবনে ফেভার ক্লিনিক চালু হয়। ১১ জুন পর্যন্ত ক্লিনিকে ১৭ হাজার ৩৫৬ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। একই ভবনের দ্বিতীয় তলায় গত ১ এপ্রিল চালু হওয়া করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ ল্যাবরেটরি চালু হয়। এ পর্যন্ত ল্যাবরেটরিতে ১৯ হাজারেরও বেশি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়েছে।
দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। শুরুর দিকে সংক্রমণ মৃতের সংখ্যা সীমিত থাকলেও পর্যায়ক্রমে তা ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং সংক্রমিত হয়ে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। গতকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ৫২৩ জনে।
একই সময়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৫ জন। আক্রান্ত ও মৃতের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা তথা ঢাকা বিভাগ এবং চট্টগ্রাম বিভাগ।
এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুবরণকারী এক হাজার ৯৫ জনের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৩১৯, ঢাকা বিভাগে ৩১৬, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৮৮, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৩, রাজশাহী বিভাগে ২৭, রংপুর বিভাগে ৩২, খুলনা বিভাগে ১৭, বরিশাল বিভাগে ২৯ এবং সিলেট বিভাগে ৪৪ জনের মৃত্যু হয়।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে অব্যাহতভাবে করোনাভাইরাস আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শনাক্তকরণ ও ভর্তি হওয়ার জন্য রোগীর ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় রাজধানীসহ সারাদেশে সুনির্দিষ্টভাবে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কিছু হাসপাতাল ডেডিকেটেড হিসেবে চিহ্নিত করে দিলেও এখনও পর্যন্ত বেশকিছু হাসপাতালে এখনও রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ বেশি হওয়ায় সরকারি হাসপাতালে ওপর চাপ বাড়ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ কমানো না গেলে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়বে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার রাজধানীসহ সারাদেশে অধিক সংক্রমিত এলাকা চিহ্নিত করে রেড, ইয়োলো এবং গ্রিন জোনে ভাগ করে পর্যায়ক্রমে লকডাউন শুরু করেছে।
দেশের অন্যতম বৃহৎ এই হাসপাতালে এতদিন করোনা রোগীদের সরাসরি ভর্তি ও চিকিৎসা করা হতো না। ফলে খোদ বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরাও হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা সেবা পাননি। দুজন সিনিয়র অধ্যাপক অন্য হাসপাতালে ভর্তি হন এবং মৃত্যুবরণ করেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা না থাকায় তারা এতদিন রোগী ভর্তি করেননি। তাছাড়া করোনা রোগীদের বিশেষায়িত সেবা প্রদানের জন্য প্রস্তুতির দরকার আছে। সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর কেবিন ব্লকটি করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
এমইউ/এসআর/জেআইএম