স্বাস্থ্য

৩৯৯ আইসিইউ শয্যার কতটিতে আসলে সেবা মিলছে?

করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের মধ্যে তীব্র শ্বাসকষ্টের মুমূর্ষু রোগীদের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়ার কথা বলেন চিকিৎসকরা। দেশে যখন করোনার সংক্রমণ এবং এতে মৃত্যু জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে, তখন ভাইরাসটির উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালমুখী রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু তীব্র শ্বাসকষ্ট বা আরও কঠিন অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছালেও মিলছে না আইসিইউ শয্যা। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আইসিইউ যেন দুর্লভ ‘সোনার হরিণ’ হয়ে উঠেছে।

Advertisement

আগে তো বলা হতো, অর্থাভাবে গরিব মানুষ সেবা পায় না, বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিকও আইসিইউ শয্যা পাচ্ছেন না। অ্যাম্বুলেন্সে করে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটেও কারও মন গলাতে পারছেন না। এমনকি খোদ চিকিৎসকদেরই ভুগতে হচ্ছে এই সংকটে। এই ছোটাছুটিতেই অনেকে নিথর হয়ে যাচ্ছেন চিরতরে। আইসিইউ শয্যা না পাওয়া কিংবা হাসপাতালের দরজা না খোলার এমন পরিস্থিতিতে চিন্তিত সাধারণ সেবাপ্রার্থী থেকে শুরু করে চিকিৎসকরা পর্যন্ত।

প্রথম চিকিৎসক হিসেবে করোনায় প্রাণ হারানো সিলেটের ডা. মো. মঈন উদ্দিন এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ পাননি বলে অভিযোগ ওঠে। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আনা হলেও মারা যান তিনি। এরপর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে অনেকের সেবা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার খবর প্রকাশ হয় সংবাদমাধ্যমে। সবশেষ বুধবার চট্টগ্রামে হাসপাতালের সামনে আয়ূব আলী নামে একজনসহ চার ব্যক্তির মৃত্যুর খবর প্রকাশ হয়েছে জাগো নিউজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুসারে, রাজধানীসহ সারাদেশে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে সর্বমোট ৩৯৯টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে ২১৮টি, ঢাকা বিভাগে ৪৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৪টি, রাজশাহী বিভাগে ২৮টি, খুলনা বিভাগে ১৮টি, বরিশাল বিভাগে ১৮টি, সিলেট বিভাগে ১৬টি, রংপুর বিভাগে ১৩টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে সাতটি আইসিইউ শয্যা রয়েছে।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ২১৮টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে বলে দাবি করা হলেও কার্যত এ সংখ্যা অনেক কম। কোথাও প্রয়োজনীয় জনবল, কোথাওবা যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে থাকায় আইসিইউতে সেবা দেয়া যাচ্ছে না, সেজন্য ভর্তি নেয়া হচ্ছে না রোগী।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ৭০টিরও বেশি আইসিইউ শয্যা হয়তো প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে, অথবা যন্ত্রাংশ বিকল থাকায় রোগী ভর্তি নিতে পারছে না। এর মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ১০টি, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১৭টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪টি, পুরান ঢাকার লালকুঠি হাসপাতালে পাঁচটি, ঢাকা মহানগর হাসপাতালে পাঁচটি আইসিইউ শয্যায় প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব ও যন্ত্রপাতি বিকল থাকাসহ বিভিন্ন কারণে রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। এছাড়া কিছু কিছু করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল, যেমন শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে এখন পর্যন্ত রোগী ভর্তিই নেয়া হচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসক ক্ষোভ প্রকাশ করে জাগো নিউজকে বলেন, তিন মাস সময় পেল প্রস্তুতির জন্য, এখনো পর্যন্ত করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হলো না। বর্তমানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং সে তুলনায় আইসিইউ শয্যার সংখ্যা খুবই অপ্রতুল হওয়ায় একটি আইসিইউ শয্যা এখন সোনার হরিণ। বড় ধরনের তদবির না থাকলে আইসিইউতে ভর্তি হতে না পেরে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শুধু সাধারণ মানুষই নন, ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হিসাবে যেসব চিকিৎসক-নার্স জীবনের মায়া ত্যাগ করে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তারা আক্রান্ত হলেও আইসিইউ চিকিৎসা সেবা পাবেন, এমন নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না।

দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুসারে, এই নয়জনসহ দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৫২৩ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায়ই শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ৪৭১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন এক হাজার ৯৫ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায়ই মারা গেছেন ৪৬ জন। তবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৭ হাজার ২৫০ জন।

Advertisement

এমইউ/এইচএ/পিআর