অর্থ পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের দেশের আইনটি ভিজিট (দেখা) দরকার। আইনে যদি কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে, এটাকে আরও কম্প্রিহেনসিভলি ডেলিভারি করতে পারি। মনে হয় তখন এই প্রশ্নের জবাব দেয়া অনেক সহজ হবে। কোনো আইনই নাই, এভাবে যে টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।’
Advertisement
আজ শুক্রবার (১২ জুন) বিকেলে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট-উত্তর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।
এক সংবাদকর্মী প্রশ্ন করেন, বাজেট বক্তব্যে আপনি (অর্থমন্ত্রী) বলেছেন, অর্থ পাচারকারী কেউ যদি প্রমাণিত হয়, তার কাছ থেকে ৫০ শতাংশ কর আদায় করতে হবে। এ পর্যন্ত অনেক অর্থ পাচারকারীর খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। এমনকি অনেকে তাদের ওয়েবসাইটেই বলে থাকে বিভিন্ন দেশে তাদের বিনিয়োগ আছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বলে যে, তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বিনিয়োগ করে নাই। তাহলে অর্থ পাচারকারীদের ধরার ব্যাপারে সরকার কতটা মনোযোগী?
সম্প্রতি একটি গ্রুপের (শিকদার গ্রুপ) ব্যাপারে পত্রপত্রিকায় এসেছে যে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশাল বিনিয়োগ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে যে, এই বিনিয়োগের খবর তাদের কাছে নাই। তাহলে আপনি তো অর্থপাচারকারীদের ধরছেনই না। আপনি (অর্থমন্ত্রী) প্রমাণ হলে যে আদায় করবেন, আসলে আপনি ধরবেন কিনা?
Advertisement
এই প্রশ্নের উত্তরে অর্থ পাচারকারীদের ধরার জন্য পর্যাপ্ত আইন না থাকার কথা জানান অর্থমন্ত্রী। তবে এই প্রশ্নের পর অনেকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন অর্থমন্ত্রী। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আমল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে উত্তর দেয়ার জন্য আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী। তবে আসাদুল ইসলাম আর শামসুল আলম উত্তর দিতে অপারগতা জানান। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর লাইনে থাকলেও উত্তর দেননি। একপর্যায়ে অর্থমন্ত্রীই এর উত্তর দেন।
উত্তরে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা যদি এখন অটোমেশন করতে পারি, ইফ উই ক্যান গো ফর ফুললি অটোমেটেড সিস্টেম, আমাদের এখানে যদি করা যায় তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তবে ইদানিং কমেছে, এটা ঠিক। আগে যেমন কোনো পত্রিকা খুললেই দেখা যেত যে, মাল আসে নাই, টাকা চলে গেছে। অটোমেশনের মাধ্যমেই এটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আর বাকিটা আইনি প্রক্রিয়ায় করতে পারেন (বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে উদ্দেশ্য করে)। আর আইনি প্রক্রিয়া যদি আরও শক্তিশালী করতে পারেন, তাহলে সহজ হবে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো সরকারই চাইবে না, দেশের অর্থ বিদেশে চলে যাক। প্রত্যেক সরকারের প্রথম শর্তই থাকে যে, যারা অপরাধ করবে, তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনি প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা। আমরাও চাই, আমাদের দেশের অর্থ বিদেশে না যাক। এ দেশের অর্থ এখানেই খরচ করতে হবে। যারা খরচ করতে চায় না, তারা এখান থেকে একেবারেই চলে যাক।’
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এবার যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে সেটাতে মূলত মানুষকে রক্ষা করাকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। টাকা কোথা থেকে আসবে সেটা পরে দেখা যাবে। আগে আমরা খরচ করতে চাই। পরে আয় করব।
Advertisement
তিনি বলেন, এবারের বাজেট দেয়া হয়েছে মানুষকে রক্ষার জন্য। মানুষকে খাবার দিতে হবে। চাকরি হারাদের চাকরি দিতে হবে, চিকিৎসা দিতে হবে। এবারের বাজেটে আমরা এসব গুরুত্ব দিয়েছি।
আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য টাকার কোনো অভাব হবে না। কিন্তু তাদের সার্ভিসটা নিশ্চিত করতে হবে। ইফেকটিভ সার্ভিস দিতে হবে। উন্নত দেশের কথা বলব না, আমাদের সমমানের যেসব দেশ যে মানের চিকিৎসা সেবা দেয়, অন্তত সে মানে দ্রুত চলে আসতে হবে।’
পিডি/এমএফ/জেআইএম