প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্বের ও জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হয়নি বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু সেটি যথেষ্ট কি না, সেটি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বলে মনে করে সংস্থাটি।
Advertisement
বৃহস্পতিবার সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, 'প্রথমত বাজেটের লক্ষ্য কী? এই বছরের বাজেটের লক্ষ্য হওয়া উচিত কোভিড-১৯ মহামারির ফলে স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির যেসব অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে সেগুলো মোকাবিলা করা এবং অর্থনীতির যে গতিধারা ছিল সেটি ফিরিয়ে আনা। এই বাজেটে সেদিক থেকে আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষার কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে? ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সেটিতে এই প্রশ্ন তৈরি হয় যে, আমরা কি অনুমান করে নিচ্ছি যে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে? আর তাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ওপরে যে গতিধারায় ছিল সেখানে ফিরে আসবে?'
'তার অর্থ হচ্ছে অর্থনীতি পুনরায় দ্রুত সচল হয়ে উঠবে, যেটাকে আমরা ‘ভি শেপড রিকভারি’ বলি। বাস্তবতা তা বলছে কি না, সেটা একটা প্রশ্ন থেকে যায়। আমরা দেখছি যে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি, বিশেষ করে সংক্রমণের মাত্রা আরও বাড়ছে, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়ছে এবং কবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে চালু করা যাবে কি না, সেটি নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে।'
Advertisement
'পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতির বড় দুইটি চালিকাশক্তি—একটি হচ্ছে রফতানি, আরেকটি হচ্ছে রেমিট্যান্স। এই দুটি খাতেই আমরা বড় ধরনের ধাক্কার আশঙ্কা করছি। বিশেষ করে আমাদের রফতানির যে বড় দুটো গন্তব্য—একটি হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরেকটি হচ্ছে উত্তর আমেরিকা। এই দু’টো অঞ্চলেই নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সুতরাং, এই দেশগুলোতে সামনের দিনগুলোতে আমাদের রফতানি কতটুকু বাড়বে, সামগ্রিকভাবে কতটুকু বাড়বে, সেটিও কিন্তু একটা বড় প্রশ্ন।'
সানেম আরও বলছে 'আমরা দেখছি যে, তেলের দাম অভূতপূর্বভাবে কমে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো—যেগুলোতে আমাদের শ্রমিকরা কাজ করেন—সেগুলোতেও অর্থনীতি ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়েছে। সুতরাং, ওই দেশগুলো থেকে ভবিষ্যতে আমরা কতটুকু রেমিট্যান্স পাব, সেটি নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। ওই দেশগুলোতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হওয়ার কারণে এমনও আশঙ্কা রয়েছে যে, তারা আমাদের বড় সংখ্যক শ্রমিককে ফিরিয়ে দিতে পারেন। এই যে অনেকগুলো সংকট সামনের দিনগুলোতে ঘনীভূত হতে যাচ্ছে, তার সাথে ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন সংগতিপূর্ণ কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।'
'এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু সেটি যথেষ্ট কিনা সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারণ, আমরা যে বড় ধরনের স্বাস্থ্যগত সংকট দেখছি এবং সেই সংকট মোকাবিলায় আমাদের যে অস্থিরতা, অদক্ষতা, সক্ষমতার অভাব দেখছি এটা কিন্তু একদিনে হয় নি, এটা দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ফলাফল। আমাদের স্বাস্থ্যখাত, বিশেষ করে সরকারি স্বাস্থ্যখাতকে দীর্ঘদিন অবহেলা করা হয়েছে এবং আমরা বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতেও দেখছি দায়বদ্ধতার একটা বড় ধরনের অভাব। এই যে দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত ফলাফল সেটারই প্রতিফলন আমরা দেখছি এই স্বাস্থ্য সংকটে এবং সরকারি স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশায়।'
উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার (১১ জুন) ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার। প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।
Advertisement
এমইউএইচ/জেডএ/জেআইএম