কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের মধ্যে কেএন-৯৫ মাস্ক আমদানিতে ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহারের ঘটনায় এলান করপোরেশনের মালিক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার পর এবার একই ঘটনায় অনিয়ম-জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে তমা কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে।
Advertisement
সম্প্রতি সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপার্টমেন্টে (সিএমএসডি) এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের সময় কার্টনে চুক্তির তুলনায় কম মাস্ক পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। চিঠি দিয়ে মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তমা কনস্ট্রাকশনের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২ মে সিএমএসডিতে তিন লাখ পিস এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ পায় তমা কনস্ট্রাকশন। কার্যাদেশের বিপরীতে পরদিন প্রথম ধাপে ২৫২ কার্টনে ৬০ হাজার ৪৮০ পিস মাস্ক এবং দ্বিতীয় ধাপে ১১১ কার্টনে ২৬ হাজার ৬৪০ পিস মাস্ক সরবরাহ করে। প্রতি কার্টনে ১২ বক্স আর প্রতি বক্সে ২০ পিস করে মাস্ক সরবরাহের চুক্তি ছিল।
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তমা কনস্ট্রাকশনের পক্ষ থেকে সিএমএসডিতে সরবরাহ করা মাস্কের প্রতিটি লটে কম মাস্ক সরবরাহ করা হয়।
Advertisement
গত বুধবার পুনরায় ৪২০ কার্টনে মোট এক লাখ ৮০০ পিস মাস্কের সরবরাহ আসে। এ সময় তমা ট্রান্সপোর্টেও পিকআপভ্যান জব্দ করে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে মাস্কের ২০টি কার্টন তল্লাশি করা হয়। এ সময় পাঁচটি কার্টনে এক থেকে দুটি করে বক্স কম পাওয়া যায়, যার প্রতিটি বক্সে ২০টি করে মাস্ক থাকে।
পরে গোয়েন্দা সংস্থাটির পক্ষ থেকে সিএমএসডি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হলে তমা কনস্ট্রাকশনের প্রতিনিধি মো. মতিউর রহমানকে ডেকে পাঠানো হয়। পরে প্রতি কার্টনে মাস্ক কম থাকার বিষয়টি জানিয়ে তমা কনস্ট্রাকশনে চিঠি পাঠায় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের ডেস্ক অফিসার (স্টোর) ডা. সাব্বির আহমেদ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘চালান অনুযায়ী আপনাদের প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া এক লাখ ৮০০ পিস এন-৯৫ মাস্ক গ্রহণ করার সময় দৈবচয়নের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণে ২০টি কার্টনের মাঝে পাঁচ থেকে ছয়টি কার্টনে এক থেকে দুটি বক্স কম পাওয়া যায়। এভাবে কার্টনে বক্স না থাকলে আনুপাতিক হারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাস্ক কম পাওয়া যাবে, যা অনভিপ্রেত ও চুক্তিশর্ত লঙ্ঘন। এ কারণে প্রাথমিকভাবে মালামাল গ্রহণ করা হলো না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তমা কনস্ট্রাকশনের সমন্বয়কারী (মেডিকেল টিম) মতিউর রহমান বলেন, ‘পোর্ট থেকে আনা পণ্যের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই কম-বেশি বোঝা যায় না। তাই সিএমএসডি কর্তৃপক্ষ পণ্য গ্রহণ করার সময় যে পরিমাণ পণ্য তারা পেয়েছেন, তার ওপর চালান গ্রহণ করে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবার মালামাল নেয়ার আগে সিএমএসডি কার্টন ও প্যাকেট গুণে নেয়। যে পরিমাণ মালামাল থাকে, সেটি উল্লেখ করে চালানে স্বাক্ষর করে দেয়া হয়।
Advertisement
এর আগে, কেএন-৯৫ মাস্ক আমদানিতে ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহারের ঘটনায় এলান করপোরেশনের মালিক ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।
আমিনুলের বিরুদ্ধে গত ২৯ মে বনানী থানায় মামলাটি করেন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, এলান করপোরেশনের নামে মাস্ক আমদানির জন্য তিনি অন্য একজনকে লাইসেন্স ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন, ফলে এর দায় তার নয়।
অন্যদিকে এলান করপোরেশনের লাইসেন্স ব্যবহার করে এসব মাস্কের আমদানিকারক ঢাকার হাজারীবাগের তাজুল ইসলাম ও তার গাড়িচালকের বিরুদ্ধেও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে পুলিশ।
জেইউ/এমএআর/এমএস