রাজধানী ঢাকা মহানগরীর পুরো এলাকাকে লকডাউন ঘোষণার দাবিতে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) আইনজীবী মো. মাহবুবুল ইসলামের পক্ষে এই রিট আবেদন করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ নিজেই।
Advertisement
রিটে ঢাকা শহরকে লকডাউন ঘোষণা এবং চিকিৎসার জন্যে পর্যাপ্ত হাই ফ্লো নেজাল অক্সিজেন ক্যানুলা সংগ্রহের দাবি জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই (হাসপাতাল ও প্রশাসন), সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর সচিবলায়ের (ক্যাবিনেট) সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি), র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), পুলিশ কমিশনার এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট ১২ জনকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে।
রিটে বলা হয়েছে- পুরো ঢাকা শহর লকডাউনের পর উক্ত সময়ে সিটি করপোরেশনের মেয়রগন কমিশনারদের মাধ্যমে প্রত্যেক এলাকায় প্রয়োজনে গরিবদের খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ করবেন। এ কাজে সরকার সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করবে। স্বাস্থ্য কর্মীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য করোনাকালে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
রিটে আরও বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণে ঢাকা শহরে হাজার হাজার রোগী সনাক্ত হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে ১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। গত ১৮ এপ্রিল সরকার প্রফেসর মো. শহিদুল্লাহকে সভাপতি করে ১৭ সদস্য বিশেষজ্ঞ নিয়ে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি গঠন করার পর পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় উক্ত কমিটি সর্বশেষ গত ৮ জুন এক সভায় সর্বসম্মতভাবে করোনায় মৃত্যু কমানোর জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং কার্যকরি সুপারিশ প্রদান করেন। তাই উক্ত রিট আবেদনে পরামর্শক কমিটির সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ সমূহের বাস্তবায়নের নির্দেশনা চওয়া হয়েছে।
Advertisement
মনজিল মোরসেদ বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার বন্ধ করতে সারাদেশে আক্রান্ত ও ঝুঁকির মাত্রার ভিত্তিতে যতটা বড় এলাকায় সম্ভব, জরুরিভাবে লকডাউন করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এতে মনে হচ্ছে সবচেয়ে বেশী ঝুকিতে রাজধানীবাসীরা। তাই রাজধীনী ঢাকার পুরো এলাকা লকডাইন চেয়ে রিট করা হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনা মহামারির ব্যাপক সংক্রমণে ঢাকা শহরে হাজার হাজার রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। ইতিমধ্যে এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। এর মধ্যে ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তা স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যে পর্যাপ্ত হাই ফ্লো নেজাল অক্সিজেন ক্যানুলা সংগ্রহ রাখার জন্যে আর্জি জানিয়েছি।
মনজিল মোরসেদ বলেন, ঢাকা শহরে এখন ভাইরাসটি যেভাবে ছড়িয়েছে এবং আতঙ্কজনক অবস্থা তৈরি হয়েছে, সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতামত মেনে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
তিনি বলেন, মৃত্যু ঠেকাতে ঢাকা শহরকে লকডাউন করতে নির্দেশনা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ কমিটি। সেই নির্দেশনা অমান্য করায় মানুষের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে। কাজেই জীবন রক্ষায়ই লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামতই রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
Advertisement
গত ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী প্রথম ধরা পড়ে। পরিস্থিতি ক্রম অবনতির দিকে যেতে থাকলে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আর ছুটি না বাড়ানোর ফলে শেষ হয় সরকারঘোষিত টানা ৬৬ দিনের ছুটি। এটিই ছিল দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে লম্বা ছুটি।
তবে যে কারণে দীর্ঘ এ ছুটি সরকার ঘোষণা করেছিল দৃশ্যত তার কোনো ফল পাওয়া যায়নি। কারণ, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি কোনো উন্নতি এখনও দেশে দৃশ্যমান নয়। প্রতিদিনই বাড়ছে এ ভাইরাসে আক্রান্তর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় সংক্রমণ বিবেচনায় বিভিন্ন এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকায় ভাগ করে এলাকাভিত্তিক বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়।
সে অনুযায়ী ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার এলাকা মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য পূর্ণ লকডাউন প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির বিশেষজ্ঞরাও।
সরকারি হিসাবে, দেশে এ পর্যন্ত ৭৪ হাজার ৮৬৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে, মারা গেছেন ১ হাজার ১২ জন।
এফএইচ/এনএফ/পিআর