মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে এক বাংলাদেশি শ্রমিককে গাড়ি ময়লা করার অভিযোগে নির্যাতন করেছেন মালয়েশিয়ান এক গাড়ি মালিক। গত শনিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুর ২ টার দিকে কুয়ালালামপুরের সুংগাই বুলুহ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশি শ্রমিককে নির্যাতনের ঘটনার আংশিক দৃশ্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে তোলপাড় শুরু হয়েছে ফেসবুকে। দোকানের গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা এ নির্যাতনের আংশিক দৃশ্য শনিবার রাত পর্যন্ত প্রায় ৪৯ হাজার বার শেয়ার হয়েছে এবং ১ মিলিয়নেরও বেশি দেখা হয়েছে। আর মন্তব্য করা হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার। ২ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, বাংলাদেশি শ্রমিক গাড়ির ভেতরে ড্রাইভিং সিটে বসে কাজ করছেন। গাড়ির মালিক এ দৃশ্য দেখে রেগে যান ও গাড়ি থেকে ওই শ্রমিককে বের হতে বলেন। এ অবস্থায় শ্রমিক গাড়ি থেকে বের হয়ে যান ও মালিক গাড়ির ভেতরে যান। এরপর তিনি রাগান্বিত হয়ে শ্রমিককে গালিগালাজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ওই শ্রমিকের গালে থাপ্পড় মারেন। কিছুক্ষণ থেমে গালিগালাজ করে ফের তার গালে থাপ্পড় দেন।ভিডিও পোস্টকারী আতিয়া আবদুল হামিদ নামের এক ব্যক্তি ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে কাজ করা ও ময়লা করার অভিযোগে বাংলাদেশি শ্রমিকের গালে চড়-থাপ্পড় দেন গাড়ির মালিক। শ্রমিকের পোশাক পুরানো এবং দেখতে মলিন ছিল বলে মালিক এরকম আচরণ করতে পারেন বলে আমি মনে করি। কারওয়াশের মজুরি পরিশোধ করার পরিবর্তে নিজের গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসা ও নোংরা করার অভিযোগে ১ হাজার রিংগিত (প্রায় ১৮ হাজার টাকা) দাবি করেন ওই গাড়ির মালিক।আরেকটি পোস্টে আতিয়ার লিখেছেন, চড়-থাপ্পড়ে শ্রমিকের নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। অবস্থা খারাপ হলে তাকে সুংগাই বুলুহ হাসপাতালে নেয়া হয়। এক্সরে করার পর চিকিৎসক বলেন, তার নাক ভেঙে গেছে। ওই সময় গাড়ির মালিক বাংলাদেশি শ্রমিককে দ্বিতীয়বারের মতো হামলা করেন। গোপন ক্যামেরা নষ্ট থাকায় এ দৃশ্য ধরা পড়েনি। তবে আমি মাটিতে পড়া রক্তের কয়েকটি ছবি নিয়েছি।এ ঘটনায় মালয়েশিয়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। বেশিরভাগই ওই মালিকের শাস্তি দাবি করেছেন। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকের গায়ে হাত তোলায় রিসামুদ্দিন আব ওয়াহাব নামে এক মালয়েশীয় ব্যবসায়ীকে এক লাখ টাকা (পাঁচ হাজার রিংগিত) জরিমানা করেছেন দেশটির আদালত। ১৯ অক্টোবর দেশটির পুলিশের হাতের গ্রেফতার হওয়ার পর রিসামুদ্দিনকে এ জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে রিসামুদ্দিনকে শ্রমিক সাহেব আলীর ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গাড়ি অপরিষ্কারের দায়ে গত ১৭ অক্টোবর সাহেব আলী নামে এক বাংলাদেশিকে নির্মমভাবে মারধর করেন রিসামুদ্দিন। পুরো ঘটনাটি গ্যারেজের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। বিষয়টি দেখে চরম ক্ষোভে ফেটে পড়েন শ্রমিকসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা। জড়িত ব্যক্তির শাস্তি দাবি করেন তারা। এ ঘটনায় ভীষণভাবে সমালোচিত হয় দেশটির পুলিশও। অবিলম্বে অপরাধী রিসামুদ্দিনকে গ্রেফতারের দাবি জানালে ১৯ অক্টোবর তাকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে চিকিৎসার ক্ষতিপূরণের টাকা চাইলেও তা দিতে অস্বীকার করেন রিসামুদ্দিন।এসএইচএস/আরআইপি
Advertisement