বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা। রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে বাসের সিঁড়িতে জীবাণুনাশক স্যানিটাইজারের বোতল হাতে দাঁড়িয়ে ‘সাভার পরিবহন’ নামের একটি বাসের তরুণ এক হেলপার। ‘অ্যাই আসেন-আসেন, সাভার- গেন্ডা, সাভার-গেন্ডা’ বলে অনবরত উচ্চস্বরে যাত্রী আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করলেও কোনো যাত্রী পেলেন না ওই হেলপার।
Advertisement
বিরক্ত হয়ে মুখ থেকে মাস্কটি খুলে তিনি বলছিলেন, ‘করোনার কারণে কী দিনকাল আইলো, জামাই আদরে ডাকাডাকি কইরাও যাত্রী পাই না।’
ওই বাসের ভেতরে দেখা যায়, আনুমানিক ৪০ সিটের বাসটিতে সর্বসাকুল্যে যাত্রী সংখ্যা ৬-৭ জন। নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে ফাঁকা ফাঁকা হয়ে বসায় বাসটি একেবারেই খালিই দেখাচ্ছে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বাস চালক শহীদ মিয়া বলেন, ‘আগে শাহবাগে গাড়ি থামানো মাত্রই গাড়ির ভেতরের সিট ভইরা লোকজন ঠাসাঠাসি কইরা দাঁড়াইয়া যাইত। আর এখন এক সিট পরপর বসার মতো যাত্রী নাই। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কয়দিন রাস্তায় গাড়ি চালানো যাইবো তা নিয়া সন্দেহ আছে।’
Advertisement
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশে দুই মাস বন্ধ থাকার পর ১ জুন থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন গণপরিবহন চালু হয়। সংক্রমণ ঠেকাতে একটি বাসের মোট আসনের অর্ধেকসংখ্যক আসনে যাত্রী পরিবহন, বাসে ওঠার সময় যাত্রীদের জন্য জীবাণুনাশক স্যানিটাইজার রাখার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। বাসের অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহনের ক্ষতি পোষাতে আগের চেয়ে ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালুর গত দশ দিনেও গণপরিবহন চলাচল আগের মতো স্বাভাবিক হয়নি। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি রাস্তায় নামানো হলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিতসংখ্যক যাত্রী।
এ চিত্র শুধু শাহবাগের নয়, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়কের গণপরিবহনের চিত্র এটি।
বুধবার (১০ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের বাসস্ট্যান্ডে সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি মালিকানায় পরিচালিত বাসগুলোতে আসনের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা অনেক কম। সকালের দিকে বিভিন্ন অফিস-আদালতে যাওয়ার জন্য কিছুসংখ্যক যাত্রী পাওয়া গেলেও বেলা যত গড়াতে থাকে যাত্রী সংখ্যা তত কমতে থাকে। তবে বিকেলের দিকে অফিস ছুটি হলে বিভিন্ন রুটে যাত্রী সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পায় বলে জানা গেছে।
Advertisement
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ গণপরিবহনে উঠছেন না। কেউ কেউ অবশ্য ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধিকে যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেও মূলত করোনা সংক্রমণের ভীতির কারণে সাধারণ মানুষ গণপরিবহন এড়িয়ে চলছেন। যারা বাসে উঠছেন তারা মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে উঠছেন। সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করলেও বাসযাত্রীদের মধ্যে করোনা ভীতি লক্ষ্য করা যায়।
বর্তমানে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানী ঢাকা।
উল্লেখ্য গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। গতকাল ৯ জুন পর্যন্ত সর্বমোট চার লাখ ২৫ হাজার ৫৯৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষা শেষে দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৭১ হাজার ৬৭৫ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫ হাজার ৩৩৬ জন।
এমইউ/এমএফ/জেআইএম