প্রবাস

সাগরপথে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া যাত্রা থামছে না

দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের কাছে একটি প্রিয় গন্তব্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ মালয়েশিয়া। দেশটিতে পৌঁছতে তারা বেছে নেন সমুদ্রপথ। এ পথে মানব পাচারকারীদের হাত ধরে দিন দিন বেড়েই চলেছে এই যাত্রা।

Advertisement

অবৈধভাবে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় যেতে গিয়ে বিগত বছরগুলোতে নৌকা ডুবে অথবা দালালদের নির্যাতনে অনেক রোহিঙ্গার প্রাণ গেছে। অনেক রোহিঙ্গা নারী ধর্ষণের শিকার হন।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার হিউম্যান রাইটস কমিশন এবং ব্যাংককভিত্তিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ফর্টিফাই রাইটসের এক যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়, মানব পাচারকারীরা রোহিঙ্গাদের সাথে যা করছে তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সামিল। তারা হত্যা করছে। নির্যাতন করছে। জোর করে কাজ করাচ্ছে। ধর্ষণ করছে।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমালেও বর্তমানে দেশটির সীমান্ত এলাকায় জারি রয়েছে কঠোর নিরাপওাবলয়।

Advertisement

আটক রোহিঙ্গা দেশটির পুলিশের হেফাজতে

সোমবার (৮ জুন) মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় কেদাহ রাজ্যের লংকাউয়ি দ্বীপে নিজেদের নৌকা ডুবিয়ে সাঁতার কেটে তীরে ওঠার সময় ২৬৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে দেশটির নৌবাহিনী।

নৌবাহিনী জানিয়েছে, আটক রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক জলসীমায় এসে নিজেদের নৌকা ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ও ডুবিয়ে সাঁতরে তীরে উঠার চেষ্টা করেছিল। ওই নৌকা থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে এসব রোহিঙ্গা কোথা থেকে সাগর পাড়ি দিয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি কর্তৃপক্ষ।

মালয়েশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স (এনটিএফ) জানায়, সোমবার ভোরে আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে সাঁতরে মালয়েশিয়ার লংকাওয়ি দ্বীপে ওঠার চেষ্টা করছিলেন ৫৩ জন রোহিঙ্গা। তাদেরসহ অদূরে সমুদ্রে ভাসমান ভাঙা নৌকা থেকে আরও ২১৬ জনকে আটক করে মালয়েশিয়ান মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি (এমএমইএ)। ওই নৌকা থেকে রোহিঙ্গা নারীর মরদেহও উদ্ধার করা হয়। আটক ২৬৯ জন রোহিঙ্গার মধ্যে ৮০ জন পুরুষ , ১৩৮ জন নারী ও ৫১ জন শিশু।

Advertisement

সিনিয়র মন্ত্রী (সিকিউরিটি ক্লাস্টার) ইসমাইল সাবরি ইয়াকু

এনটিএফ এক বিবৃতিতে জানায়, রোববার রাতে লংকাওয়ি পুলিশের নৌশাখার কমান্ডারের কাছে তথ্য আসে যে, সমুদ্রে ভাসমান একটি নৌকা মালয়েশিয়ার জলসীমায় প্রবেশের চেষ্টা করছে। নৌকাটিকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশে বাধা দিতে দুটি জাহাজ পাঠানো হয়। ভোর ৪টার দিকে নৌকাটিকে খুঁজে পেয়ে এটিকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় পাঠানোর প্রস্তুতি নেন নৌবাহিনীর সদস্যরা। তবে তখন নৌকাটি থেকে ৫৩ জন রোহিঙ্গা লাফিয়ে সমুদ্রে নেমে তীরের দিকে সাঁতরাতে থাকেন।

এমএমইএ সদস্যরা তাদের আটক করেন জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গাদের নৌকাটি ডুবন্ত অবস্থায় ছিল। ইচ্ছাকৃতভাবেই নৌকাটির বিভিন্ন স্থানে ছিদ্র করা হয়েছিল। তাই নৌকাটির ক্ষতির পরিমাণ দেখে মানবিক কারণে নৌকাটিকে লঙকাওয়ি দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়। নৌকার সবাইকে আটক করা হয়। উদ্ধার করা মরদেহ এবং আটক ২৬৯ জনকে পরবর্তীতে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আটক এই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়া। মঙ্গলবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানান।

সিনিয়র মন্ত্রী (সিকিউরিটি ক্লাস্টার) ইসমাইল সাবরি ইয়াকু মঙ্গলবার একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অবৈধভাবে দেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে এ পর্যন্ত ৩৯৬ জন অবৈধ অভিবাসী ও ১১ জন সন্দেহভাজন চোরাচালানকারীকে আটক করেছে নৌবাহিনী।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মালয়েশিয়ার তীরে উঠতে না পেরে নৌকায় দীর্ঘসময় ধরে আটকা পড়া শত শত রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ উদ্ধার করে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি হামজাহ জয়নুদ্দিন

এ দিকে সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সেদেশের নাগরিকদের সমান সুযোগ-সুবিধা চাওয়ার দাবি করেন। রীতিমতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল রোহিঙ্গাদের দাবিটি। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেদেশের সরকারের মন্ত্রীরা মুখ খুলতে শুরু করেন।

একটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রোহিঙ্গাদের কাছে মালয়েশিয়া এখনও সবচেয়ে কাঙিক্ষত আশ্রয়স্থল। এক হিসাবে, বর্তমানে মালয়েশিয়াতে বৈধ ও অবৈধভাবে দুই লাখের মতো রোহিঙ্গা বসবাস করছেন, যাদের সিংহভাগই গেছেন সাগর-পথে মানব পাচারকারীদের হাত ধরে। তাদের মধ্যে লাখ দেড়েক জাতিসংঘের চেষ্টায় শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন। বাকিরা অবৈধভাবে লুকিয়ে থাকেন।।

গত ৩০ এপ্রিল মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি হামজাহ জয়নুদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী যেকোনো সংস্থা সোসাইটিস অ্যাক্ট ১৯৬৬ (আইন ৩৩৫) এর অধীনে অবৈধ এবং আইনানুগভাবে তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা যেতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এজেন্সিগুলো জনসাধারণের শৃঙ্খলা বজায় রাখা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের আমরা কখনও শরণার্থী মনে করি না। তাদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গণ্য করা হয়। যদি কেউ আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে চায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেডএ/এমএস