পাবনার সুজানগরের পৌর সদরে ইদ্রিস আলী মিয়া (৬০) নামের এক বৃদ্ধ করোনা উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার ভোররাতে মারা যান। ভয়ে ওই মহল্লার কেউ তার গোসল করাতে আসেননি।
Advertisement
মঙ্গলবার (৯ জুন) দুুপুরে পাবনা শহরের দুই মহৎপ্রাণ যুবক খবর পেয়ে তার জানাজা ও দাফনের কাজে অংশ নেন। ওই বৃদ্ধ দীর্ঘদিন কিডনি রোগে ভুগছিলেন। তিনি সুজানগরের পৌর সদরের মসজিদ পাড়া মহল্লার মৃত নাসির উদ্দীন মিয়ার ছেলে। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছেন।
স্বেচ্ছাসেবী দু’যুবক হলেন দেওয়ান মাহবুব ও তার সহযোগী শিশির ইসলাম। দেওয়ান মাহবুব পাবনা শহরে তার মৃত মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এবং সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক দেওয়ান আজিজুল ইসলামের ছেলে।
সুজানগর পৌরসভার মেয়র আব্দুল ওয়াহাব বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বৃদ্ধ মারা যাওয়ার পর তিনি ওই বাড়িতে যান। কিন্তু করোনা সংক্রমণের ভয়ে ওই বাড়ির লোকজন, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন কেউই তার গোসল দেওয়াচ্ছিলেন না।
Advertisement
মেয়র জানান, তিনি স্থানীয়দের অনুরোধ করার পরও কেউ শুনছিলেন না। এমনকি সুজানগরে যারা করোনা রোগীদের দাফন কাফন করাবেন বলে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন তারাও কেউ এগিয়ে আসেননি।
তিনি জানান, তিনি এরই মধ্যে জানতে পারেন পাবনা শহরের কালাচাঁদ পাড়ার বাসিন্দা দেওয়ান মাহবুব ও তার এক বন্ধু শিশির ইসলাম করোনাক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তার গোসল ও দাফনের (প্রয়োজন বোধে) মতো মহতী কাজ করে দেন।
তিনি জানান, দেওয়ান মাহবুবকে ফোনে বলামাত্রই তারা শহর থেকে দু’জন সুজানগরে রওয়ানা দেন এবং মৃত ব্যক্তির গোসল করান। তাদের দেখে অভয় পেয়ে কয়েকজন লোক আসেন। পরে তারা স্থানীয় কিছু লোকের সাথে নামাজে জানাজায় অংশ নেন। দাফন করার পর তারা দু’জন বিদায় নেন।
পৌর মেয়র আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, অনেক অনুরোধ করে মৃত ব্যক্তির গোসল করাতে কাউকে রাজি করাতে পারছিলাম না। সেখানে এ দুজন যুবক খবর পাওয়ার সাথে সাথে ছুটে আসেন।
Advertisement
তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক দেওয়ান মাহবুব জানান, তিনি এ কাজটিকে একজন মুসলমানের পবিত্র দায়িত্ব হিসেবেই নিয়েছেন।
তিনি জানান, করোনা রোগী বা সন্দেহজনক রোগী মারা গেলে ভয়ে কেউ তার গোসল বা দাফনে অংশ নিতে চান না। এ রকম ঘটনা জানার পরই তিনি ফেসবুক পেজে বেশ কিছুদিন আগে স্ট্যাটাস দেন যে, এ রকম সমস্যা হলে তাকে যেন খবর দেয়া হয়। তিনি ও তার সহযোগী শিশির হাজির হবেন সেখানে। সেই মোতাবেক তিনি পৌর মেয়রের ফোন পাওয়ার সাথে সাথে রওনা দেন বলে জানান।
তিনি আরও জানান, তার মৃত মায়ের নামে তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশন করে অসহায় মানুষদের সেবা করার চেষ্টা করছেন। ঠিক এখন মানুষের এই দুঃসময়ে তাদের পাশে থেকে তিনি সেবা করতে চান।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২২ মে গয়েশপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ধোপাদহ গ্রামের মৃত রায়হান উদ্দিনের ছেলে নুরুজ্জামান নুরু স্ট্রোকে মারা যান। করোনা সন্দেহে কেউ তার গোসলসহ দাফনের উদ্যোগ না নেয়ায় দেওয়ান মাহবুব এবং তার সহযোগী শিশির ইসলাম গোসল করান এরপর ইমামের সাথে জানাজায় অংশ নিয়ে দাফনের কাজটি সম্পন্ন করে দিয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মেহেদী ইকবাল জানান, মৃত মানুষের শরীরে কোনো জীবাণু থাকে না। মানুষ দাফন-কাফনে অহেতুক ভয় পান।
তিনি জানান, ওই বৃদ্ধ ব্যক্তির করোনা পজিটিভ কিনা এখনও ফলাফল আসেনি। তবে সপ্তাহ খানেক আগে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। ফলাফল এলে বোঝা যাবে ওই বৃদ্ধ করোনাক্রান্ত ছিলেন কিনা।
এমএএস/জেআইএম