সাহিত্য

আনিকা তাসনিম অনুপের লকডাউনের প্রেমপত্র

ইচ্ছেদের আশ্রয়

Advertisement

দুপুর রোদে আমি লিখি তার নামে চিঠি,লকডাউনের তারিখের মত এখানে হাওয়ারা ভোল বদলায়-বদলায় বৃষ্টি নামার তারিখ। চিঠিরা তবু পরিযায়ী শ্রমিকের মত মেঘের পথ ধরে,হাঁসফাঁস হৃদয় এখানে আরও তপ্ত হয়।

তবু লিখে যাই চোখের ভাষায়ইচ্ছেদের হয়তো ফেরা হবে না গন্তব্যে।পরিযায়ী শ্রমিকের মত তবু প্রাণপণ হেঁটে যায় রোগ, ক্ষুধা, তৃষ্ণা গায়ে তবু চলে পথের পর পথ।মৃত্যুর ভয় নেই...মত্ত ঠিকানার নেশায়কারণ মৃত্যু হলেও ওটাই একমাত্র আশ্রয়।

ইচ্ছেদের ইচ্ছে তারা বৃষ্টি হবে চিঠির অক্ষরে ভেজাবে তার বারান্দা।

Advertisement

****

অপ্রকৃতস্থ সময়ে স্মৃতি রোমন্থন

উড়ন্ত স্মৃতির ছায়ারা জট পাকিয়ে থাকে এখানে-ওখানেআমি এক এক করে ছাড়াতে গিয়ে,কখন যেন হারিয়ে যাই আমার অতলে।মন খারাপের গেট পেরিয়ে ছোট্ট ছিমছাম গ্রাম,সেখানে বেল ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ সেখানে নিমের ছায়াসেখানে একটা গোপন দুপুর।

আমি কখনো পেরোতে পারি না গেটমন খারাপের কর্কশ কোলাহল কার্নিশেঅক্লান্ত অবসরে আবার অপ্রকৃতস্থ হই ফিরে এসে।

Advertisement

****

মেঘ ও বৃষ্টিকে ধিক্কার

কালো কালো মেঘেরা ভেসে যাচ্ছে-লকডাউন ভেঙে ভেসে যাচ্ছেভেসে যাচ্ছে এবং হেসে যাচ্ছে।ওদের মানচিত্রে নেই কোন কাঁটাতারের সীমানা ওদের ফুসফুসে ঘা হবার ভয় নেইওদের সময়ের মাপ নেইসমাজের তাপ নেই।

সেখানে খুশি উষ্ণতা পেলে হতে পারে বৃষ্টি, ভাসিয়ে নিতে পারে যে কেউকে।পায়ে পায়ে নেচে যেতে পারে মাঠে, গঙ্গার ঘাটেমিশে যেতে পারে চেনা চোখের ঢেউয়ে,যখন-তখন।

মেঘেরা আমাদের মত অসহায় নয়-তবু ওরা কোন দায়িত্ব অনুভব করে না, ঠিক আমাদের রাজাদের মত।ওরা পারতো দাবানল নিভিয়ে দিতেওরা পারতো ছায়া হতে হেঁটে চলা শ্রমিকের মাথার ওপর।ঠায় দাঁড়িয়ে দেখলো কিন্তু ওদের সামনে আগুনে পুড়লোঅসহায় রোগীরা।কী হতো নাচের তালে তাল হারিয়ে ভেঙে না দিলে, বিধবার শেষটুকু, ওই পুরোনো দালান?শুধু যাকে ভালোবাসে ওরাতাকেই এক-আধ খানা কবিতা দিয়ে যায়।

তাই আমি পরের জন্মে মেঘ হতে চাই-অথবা এক পসলা স্বার্থপর বৃষ্টি,অল্পদিনের বেঁচে থাকায় কোনো দায় চাই না, চাই না অপরিচিতের আর্তনাদের রাতে হতে নির্ঘুম তারা।কোন বৃত্ত চাই না চারপাশে, হাতে আঁকা আমি চাই না, চাই না কোন হিসেবের খাতাঅন্যের মুখ চেয়ে একটা ভুলভাল বেঁচে থাকা।

****

উৎকণ্ঠা

গঙ্গার ধারে কি এখনো স্বপ্নরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে?না-কি ভয়েরা এক মিটার দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে?কে জানে?সন্ধ্যা নেমে গেলেই, ছিটিয়ে থাকা স্বপ্নরা গলিতে গলিতে ছড়িয়ে যেত।এ চোখ ও চোখ, চা বা কফির কাপে...তারপর জোনাকি হয়ে বাড়ি ফেরা...জোনাকিরা রাত করে তারা হয়ে যেত,সকালে ওরাই হতো ঘাসফড়িং, প্রজাপতি আর পাখি।

আমি পাখিদের খুঁজি, ভোরবেলা, বারান্দায়ইয়োগার ফাঁকে জানালায় তাকাই বারবারভাবি, এক মিটার না হোক তিন মিটারই সই।

তারপর হঠাৎ ভয় হয়, ওরা ভালো আছে তো?মাস্কটা পরেছিল ঠিকঠাক? নাকি স্বপ্নরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইনে?

এসইউ/এমকেএইচ